করোনা থেকে বিপজ্জনক দুর্ভিক্ষ

করোনার কারণে মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়ছে, হারাচ্ছে তাদের কর্মশক্তি - সংগৃহীত

  • এবনে গোলাম সামাদ
  • ২৯ মার্চ ২০২০, ২০:৩৮


চীনা সভ্যতা বহু প্রাচীন। যাকে আমরা শ্রদ্ধা প্রদর্শন করি। কিন্তু এখন চীনের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন আর সম্ভব নয়। কেননা চীন বিশ্বজুড়ে করোনা ভাইরাস ছড়িয়েছে। মাও যে দং কর্তৃক প্রতিষ্টিত চীনের দ্বারা নির্মিত হয়েছে ভয়াবহ জীবনমারণাস্ত্র। চীনের একদলীয় কমিউনিষ্ট সরকার এর নেতৃত্বে যা ঘটছে তা ভয়াবহ। চীন যদি গণতন্ত্রী হতো, তবে মনেহয় এরকম কান্ড ঘটতে পারত না। করোনা ভাইরাস ছিল বাদুড়ের পেটে। সেখান থেকে তা ছড়ায় ভাম বিড়াল বা খাটাশে (Pangolin)। করোনা ভাইরাস পিপীলিকাভুকের (Viverra civetta ) মাধ্যমে ছড়িয়েছে মানুষের দেহে। আর সেখান থেকে এখন তা ছড়াচ্ছে চারিদিকে। আমাদের দেশে যথেষ্ট সংখ্যক বাদুড় গাছে ঝুলতে দেখা যায়। বাদুড়ের দেহ থেকে করোনা ভাইরাস ছড়ায় মানুষের দেহে। জন্তুটি থেকে এসেছে মানুষের দেহে। পিপীলিকাভুক থেকেও নাকি এসেছে মানুষের দেহে। করোনা ভাইরাস ওসব জন্তুর দেহে তেমন ক্ষতি করে না। কিন্তু মানুষের দেহে উৎপন্ন করে ভয়াবহ ফুসফুসের ব্যাধি। সৃষ্টি হয় ফুসফুসের এক বিশেষ ধরণের নিউমোনিয়া। শ্বাস- প্রশ্বাসের বাতাসের সঙ্গেও নাকি ছড়াতে পারে। এই চীন পৃথিবীর কোন দেশের কাছে মিত্র হিসাবে বিবেচিত হওয়া উচিত নয়।উল্লেখ করা যেতে পারে, উহানের হাসপাতালের সেই চিকিৎসক এই ভাইরাসটিকে পৃথক করে যে জীবাণুবোমা বানিয়েছিলেন, সেটা কোন কারণে তার একটিতে বিস্ফোরণ ঘটে। তিনি নিজেও করোনা রোগে মারা গিয়েছেন। রোগ কারো মিত্র নয়।


করোনার জন্য মানুষ বাইরে কাজ করতে পারছেনা। ফলে সব কিছুরই উৎপাদন মাত্রা হ্রাসপ্রাপ্ত হবে। যেমন আমাদের দেশে এখন কৃষকরা চৈতালী ফসল তুলতে যাচ্ছে। অর্থনীতির দুটো দিক আছে। সরবরাহ ও চাহিদা। সরবরাহ কমে গেলে জিনিসের দাম বাড়ে। করোনার কারণে উৎপাদিত পন্যর সরবরাহ কমে যাবে। সুতরাং দ্রব্যমূল্য বাড়বে। এরমধ্যে যদি মুদ্রার সরবরাহ বাড়ানো হয়, তবে দ্রব্যমূল্য আরও দ্রুত বৃদ্ধি না পেয়েই পারে না। এসব সাধারণ কথা বলতে হচ্ছে কারণ কেউ কেউ বলছেন, কাগুজে মুদ্রা বানিয়ে বর্তমানে যে সংকট সৃষ্টি হয়েছে তার একটা সমাধান করা যাবে। কিন্তু যেহেতু দ্রব্য সরবরাহ কমছে, তাই মুদ্রা সরবরাহের সাধারণ অর্থ দাঁড়াবে চাহিদা বাড়ানো। যার ফলে দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি হবে।


অনেকে এই অবস্থা কাটিয়ে নেবার জন্যে বলছেন বাজারে মুদ্রা সরবরাহ বাড়াতে। এক্ষেত্রে আমাদের সাধারণ ধারণা খাপ খাচ্ছে না। মুদ্রা সরবরাহ মানে অর্থনীতি সংকট আরও কঠিন হয়ে উঠবে। ব্রিটিশ শাসন আমলে একবার প্রাকৃতিক কারণে ধানের উৎপাদন কম হওয়ায় চালের সরবরাহ কমে। অন্যদিকে সেসময় চলছিল গ্রেট ব্রিটেনের সঙ্গে জাপানের যুদ্ধ। যুদ্ধের ব্যয়ভার বহন করার জন্য ছাপানো হয়েছিল টাকা। ফল ১৩৫০ সালে সৃষ্টি হতে পেরেছিল এক ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ। করোনার কারণে নিশ্চিতভাবেই ধানের উৎপাদন কমবে। আর এর ফলে ঘটবে অন্নাভাব। করোনার কারণে মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়ছে। হারাচ্ছে তাদের সাধারণ কর্মশক্তি। পত্র-পত্রিকায় করোনার প্রভাবে কত ট্রিলিয়ন ডলারের ক্ষতি হতে যাচ্ছে তার সম্ভাব্যতার কথা বলা হচ্ছে। সেটা একটা বিরাট অংক। আমাদের দেশের অন্যতম প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ ড. আহসান এইচ. মনসুর সাহেব বলছেন যে, চীনের করোনা ভাইরাস সমস্যা দীর্ঘমেয়াদী হলে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ভয়ানক বিপর্যয় বাড়বে। তাঁর মতে, বাংলাদেশ সরকারের মেগা উন্নয়ন প্রকল্পসমূহে চীনের বিকল্প নেই।


আবার চীন থেকে ১৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের পণ্য আমদানি করে বাংলাদেশ। এসব পণ্যের দাম বাড়বে। যাতে সরকারের রাজস্ব আয়ে বড় প্রভাব পড়বে। ঘাটতি বাড়বে। সবচেয়ে বড় প্রভাব পড়বে দেশের প্রধান রপ্তানিখাত তৈরি পোষাক শিল্পে। কারণ এই খাতের মূলধনী যন্ত্রপাতি ও কাঁচামাল আমদানীর প্রধান উৎস চীন। আর চীনের মতো এত সস্তায় আমাদের কেউ এত পণ্য সরবরাহ করতে পারবে না। তিনি আরও বলেন, প্রয়োজন হলে দেশীয় কৃষকদের প্রণোদনা দিয়ে আদা ও রসুন চাষাবাদের উদ্যোগ নিতে হবে। আমাদের কাছে প্রশ্ন হলো, চীনের নিজের অর্থনীতিও করোনার কারণে ভেঙ্গে পড়তে চলেছে। চীন কি আমাদের আগের মতো অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে সহযোগিতা করতে পারবে?


করোনা ভাইরাস এখন হয়ে উঠেছে সংবাদপত্র জুড়ে আলোচ্য বিষয়। কিন্তু নিজের তৈরি করোনা ভাইরাসের জন্য চীন এখন নিজের হাতে নিজের গালেই খেতে যাচ্ছে চড়। ইতিমধ্যেই চীনের নিজের মাতৃভূমে ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৪২০ বিলিয়ন ডলারের উপর। চীনের মানুষ বর্তমান চীন সরকারের অধীনে হতে যাচ্ছে ভয়াবহ অত্যাচারের শিকার। তাদের কোন স্বাধীন সত্ত্বা নাই। বিশ্ব বিবেক জাগো। প্রয়োজনে গঠন করো আন্তর্জাতিক ব্রিগেড, চীনকে ঘিরে ফেলো। আমরা চীনকে ভালবাসি আর চীন নিজের হাতেই বিপদগ্রস্থ হলো। কিন্তু এখানেই শেষ নয়, তাদের হাতে আরো মারাত্মক অস্ত্র আছে।


আমি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে দীর্ঘ সময় অধ্যাপনা করেছি। দীর্ঘদিন ভাইরাস নিয়ে গবেষণা করতে হয়েছে। আমার ডিএসসি থিসিস ছিল ভাইরাস সংক্রান্ত। করোনা ভাইরাস পরিস্থিতি আমি তাই বলব অতটা ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠেনি। যতটা বলা হচ্ছে। একজন গ্রামীন কৃষক আমাকে এসে বললেন, আমরা হাত-পা নেড়ে খাই। এভাবে গৃহবন্দী হয়ে থাকলে আমরা মরব অনাহারে। জীবানু বোমা তৈরি হচ্ছে করোনা ভাইরাসের মত ভাইরাস দিয়ে। যা ছড়িয়ে পড়ছে সারা বিশ্বে। কিন্তু করোনার পাশাপাশি আরেকটা সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। একটা পাট-খাটা লোক (যে দিন আনে দিন খায়) সে দিনের পর দিন ঘরে বসে থাকলে কী করে খাবে? তার তো কোন আয় নেই। কৃষক মাঠে কাজ করতে পারছে না। তাই এদিক দিয়ে চৈতালি ফসলের ক্ষতি হতে যাচ্ছে। কৃষক বাঁচবে কী করে?


লেখক : শিক্ষাবিদ ও কলাম লেখক