সামরিক শক্তির দিক দিয়ে বিশ্বে সংযুক্ত আরব আমিরাতের অবস্থান ৩৬তম। দেশটি হ্যান্ডগানসহ দুটি সমরাস্ত্র নিজেরা তৈরি করে। এছাড়া রাইফেল এবং সাঁজোয়া যানসহ কয়েকটি সমরাস্ত্র তুরস্কসহ বিভিন্ন দেশের সাথে যৌথভাবে নির্মাণ করে। এর বাইরে সংযুক্ত আরব আমিরাতের সব সমরাস্ত্র বিদেশ থেকে কেনা। আরব আমিরাত বিশ্বের নবম অস্ত্র আমদানিককারক দেশ। দেশটির প্রধান অস্ত্র সরবরাহকারী যুক্তরাষ্ট্র। সংযুক্ত আরব আমিরাত সম্প্রতি আলোচনায় এসেছে মহাকাশ গবেষণার ক্ষেত্রে। প্রথম আরব এবং বিশ্বের পঞ্চম দেশ হিসেবে মঙ্গল গ্রহে স্পেসক্রাফট পাঠিয়েছে।
সংযুক্ত আরব আমিরাতের সৈন্য সংখ্যা ৬৫ হাজার। আমিরাতের ট্যাঙ্ক সংখ্যা ৪৩৪টি। সাঁজোয়া যান ৮ হাজার ৭৫০টি। সেলফ প্রপেল্ড আর্টিলারি ১৮০টি। টাউড আর্টিলারি ৭৬টি। রকেট প্রজেক্টর ১১২টি।
আমিরাতের সবগুলো মেইন ব্যাটল ট্যাঙ্ক ফ্রান্সের তৈরি। আমিরাতের কাছে যুক্তরাষ্ট্রের ৮৭টি এবং দক্ষিণ আফ্রিকার ৭৮টি সেলফ প্রপেল্ড আর্টিলারি রয়েছে। ব্রিটেনের রিকনিস্যান্স ভিহিক্যাল রয়েছে ৭৬টি।
সংযুক্ত আরব আমিরাতের কাছে তুরস্কের ইনফ্যান্ট্রি ফাইটিং ভিহিক্যাল রয়েছে ১৩৩টি। আমিরাত তুরস্কের সাথে যৌথভাবে প্রায় সাতশত ইনফ্যান্ট্রি ভিহিক্যল নির্মাণ করেছে।
আমিরাতের কাছে তুরস্ক, সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং যুক্তরাষ্ট্রের বিপুলসংখ্যক আর্টিলারি অ্যান্ড এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম রয়েছে। তুরস্কের মাল্টিপল রকেট লঞ্চার রয়েছে ৫৯টি। এছাড়া আমিরাতের কাছে রয়েছে তুরস্কের অ্যান্টি ট্যাঙ্ক উইপন।
সংযুক্ত আরব আমিরাতের সারফেস টু এয়ার মিসাইল সিস্টেম যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া এবং ব্রিটেনের। যুক্তরাষ্ট্রের প্যাট্রিয়ট এবং রাশিয়ার প্যান্টসার মিসাইল সিস্টেম রয়েছে আমিরাতের কাছে।
আমিরাতের মোট সামরিক বিমানের সংখ্যা ৫৫২টি। এর মধ্যে ফাইটার জেট ১০০টি। ডেডিকেটেড অ্যাটাক ২০টি। সামরিক পরিবহন বিমান ৪১টি। প্রশিক্ষণ বিমান ১৪৬টি। স্পেশাল মিশন ১৯টি। অ্যারিয়েল রিফুয়েলিং ট্যাঙ্কার ৩টি। আমিরাতের হেলিকপ্টার সংখ্যা ২২৩টি। অ্যাটাক হেলিকপ্টার ৩০টি। আসুন জেনে আসি দেশটির বিমান শক্তির আরও কিছু তথ্য।
সংযুক্ত আরব আমিরাতের কাছে যুক্তরাষ্ট্রের ফোর্থ জেনারেশন এফ-১৬ জঙ্গি বিমান রয়েছে ৭৭টি। ফ্রান্সের মিরেজ ২০০০ রয়েছে ৬৩টি। যুক্তরাষ্ট্রের সি-১৭ এবং সি-১৩০ রয়েছে ১৬টি। এ ছাড়া স্পেনের সিএন-২৩৫ রয়েছে ৬টি।
সংযুক্ত আরব আমিরাত এয়ারবর্ণ আর্লি ওয়ার্ণিং এন্ড কন্ট্রোল সিস্টেম এবং মেরিটাইম টহলের ক্ষেত্রে ব্যবহার করে কানাডার বম্বারডিয়ার । আমিরাতের বিমান বাহিনীতে রয়েছে বেল, সিকরস্কি, অগাস্টা ওয়েস্টল্যান্ড, ইউরো কপ্টার এবং বিএই হকসহ বিভিন্ন ধরনের হেলিকপ্টার।
যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত এপাচি হেলিকপ্টার রয়েছে ৩০টি এবং চিনুক হেলিকপ্টার রয়েছে ১৯টি। সিকরস্কি ইউএইচ-৬০ হেলিকপ্টার রয়েছে ৮০টি।
চীন সংযুক্ত আরব আমিরাতের কাছে ২০১১ সালে উইং লং-১ ড্রোন বিক্রি করে। এ সময় সংযুক্ত আরব আমিরাত ড্রোন বিষয়ে খুবই আগ্রহ দেখায়। চীনের কাছ থেকে তারা প্রথম ক্রেতা হিসেবে উইং লং-২ ড্রোন কেনার চুক্তি করে। স্টকহোম পিস রিসার্চ ইন্সটিটিউটের তথ্য অনুসারে উইং লং ড্রোনের জন্য সংযুক্ত আরব আমিরাত চীনের কাছ থেকে ৫শ ব্লু এরো-৭ মিসাইল কেনে এবং এগুলো তারা মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে মোতায়েন করে।
চীনা চিএইচ-৪ এবং উইং লং-১ ড্রোন যুক্তরাষ্ট্রের এমকিউ-১ প্রিডেটর ড্রোনের প্রায় সমান ক্ষমতাস্পন্ন। আর উইং লং-২ আরো শক্তিশালী এবং এডভান্সড।
আমিরাতের মোট রনতরীর সংখ্যা ৭৫টি। এর মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী রণতরী হলো করভেট। তাদের কাছে ৯টি করভেট এবং ২টি মাইন ওয়ারফেয়ার রয়েছে। বাকীগুলো টহল জাহাজ। সংযুক্ত আরব আমিরাতের করভেট ফ্রান্সের তৈরি। এবার আমরা জেনে আসি সংযুক্ত আরব আমিরাতের সমরাস্ত্র সর্ম্পকে নানা তথ্য
সংযুক্ত আরব আমিরাতের নিজস্ব তৈরি অস্ত্র হলো নন-কমব্যাট আরমারড ভিহিক্যাল এবং হ্যান্ডগান। দেশটি তুরস্কের সাথে ইনফ্যান্ট্রি ফাইটিং ভিহিক্যাল, মাল্টিপল রকেট লঞ্চার তৈরি করে। এ ছাড়া জার্মানির সাথে অ্যাসল্ট রাইফেল, রাশিয়ার সাথে স্নাইপার রাইফেল তৈরি করে।
২০১৬ থেকে ২০২০ পর্যন্ত ৫ বছরে সংযুক্ত আরব আমিরাত সবচেয়ে বেশি অস্ত্র কিনেছে যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে। এরপর ফ্রান্স এবং তৃতীয় স্থানে রয়েছে রাশিয়ার নাম। গত ৫ বছরে আমিরাত যত অস্ত্র কিনেছে তার ৬৪ ভাগ কিনেছে যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে, ১০ ভাগ কিনেছে ফ্রান্সের কাছ থেকে এবং ৪ দশমিক ৭ ভাগ কিনেছে রাশিয়ার কাছ থেকে।
মধ্যপ্রাচ্যের শীর্ষ অস্ত্র আমদানিকারক দেশের তালিকায় সংযুক্ত আরব আমিরাতের স্থান চতুর্থ । শীর্ষে সৗদি আরব, দ্বিতীয় মিশর এবং তৃতীয় কাতার।
২০০১ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত বিশ্বের শীর্ষ ১০টি অস্ত্র আমদানিকারক দেশের তালিকায় নাম রয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাতের। তবে গত ৫ বছরে সংযুক্ত আরব আমিরাতের অস্ত্র আমদানি ৩৭ ভাগ কমেছে। সিপ্রির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে শীঘ্রই সংযুক্ত আরব আমিরাতের অস্ত্র আমদানির হার অনেক বেড়ে যাবে। ইসরাইলের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক হওয়ায় যুক্তরাষ্ট্র তাদের কাছে ৫০টি এফ-৩৫ বিমান বিক্রিতে রাজি হয়েছে। এসব বিমান হস্তান্তর করলে আমিরাতের অস্ত্র আমদানির হার অনেক বৃদ্ধি পাবে আগের তুলনায়।
যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে ৫০টি এফ-৩৫ বিমান পাওয়ার কথা রয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাতের। ট্রাম্প প্রশাসনের শেষের দিকে এফ-৩৫ বিমানসহ ২৩ বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র বিক্রি চুক্তি হয়। ইয়েমেন যুদ্ধের কারণে বাইডেন প্রশাসন এ চুক্তি সাময়িক স্থগিতের ঘোষণা দেয় প্রথমে। কিš ‘ বাইডেন প্রশাসন সংযুক্ত আরব আমিরাতের কাছে ২৩ বিলিয়ন ডলার অস্ত্র বিক্রি চুক্তি নিয়ে সামনে আগাতে চায়। কারণ তাদের আশঙ্কা তারা এ অস্ত্র বিক্রি না করলে আমিরাত চীনসহ অন্য দেশ থেকে কিনতে পারে। এতে মধ্যপ্রাচ্যের অস্ত্র বাজারে প্রবেশ ঘটবে চীনের।
যুক্তরাষ্ট্র সংযুক্ত আরব আমিরাতের কাছে ২৩ বিলিয়ন ডলার মূল্যের যেসব অস্ত্র বিক্রি চুক্তি করেছে তার মধ্যে রয়েছে এফ -৩৫ ফাইটার জেট, এমকিউ-৯বি আর্মড ড্রোন বিমান এবং অন্যান্য সমরাস্ত্র। ২০১৯ থেকে ২০২০ সালে সংযুক্ত আরব আমিরতের ৫৬ শতাংশ অস্ত্র সরবরাহ করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
কানাডার অস্ত্রের অন্যতম ক্রেতা সংযুক্ত আরব আমিরাত। ২০১৬ সাল থেক ২০২০ সাল পর্যন্ত কানাডা সবচেয়ে বেশি অস্ত্র বিক্রি করেছে সৌদি আরবের কাছে এরপর সংযুক্ত আরব আমিরাত। এ সময়ে কানাডা তাদের ৪৯ ভাগ অস্ত্র বিক্রি করেছে সৌদি আরবের কাছে এবং ১৭ ভাগ অস্ত্র বিক্রি করেছে সংযুক্ত আরব আমিরাতের কাছে।
সৌদি আরবের নেতৃত্বে ইয়েমন বিরোধী যুদ্ধের অন্যতম অংশীদার সংযুক্ত আরব আমিরাত। তাছাড়া লিবিয়ায় বিদ্রোহী হাফতার বাহিনীর অন্যতম পৃষ্ঠপোষক সংযুক্ত আরব আমিরাত। হাফতার বাহিনীকে আমিরাত অকাতরে অর্থ, জ্বালানি তেল এবং সমরাস্ত্র সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে জাতিসংঘ স্বীকৃত সরকারের বিরুদ্ধে।
মধ্যপ্রাচ্য দীর্ঘকাল ধরে বিশ্বে সবচেয়ে অস্থিতিশীল একটি অঞ্চল। ইরান আর আরব দেশগুলোর পুরনো দ্বন্দ্বের পাশপাশি সম্প্রতি মধ্যপ্রাচ্যে নতুন দ্বন্দ্ব শুরু হয়েছে। পূর্ব ভূমধ্যসাগর ও লিবিয়া নিয়ে তুরস্ক মিশর-দ্বন্দ্ব চলছে। অপর দিকে চলছে সৌদি নেতৃত্বে ইয়েমেন যুদ্ধ। এসব কারণে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে অস্ত্র প্রতিযোগিতা বেড়েছে। এই অস্ত্র প্রতিযোগিতায় সক্রিয় দেশ হচ্ছে আরব আমিরাত।
এছাড়া মহাকাশ গবেষনার জন্য সংযুক্ত আরব আমিরাত ২০০৬ সালে প্রতিষ্ঠা করেছে মোহাম্মদ বিন আব্দুর রশিদ স্পেস সেন্টার। প্রথম কোনো আরব দেশ হিসেবে সংযুক্ত আরব আমিরাত মঙ্গল গ্রহে মহাকাশ যান পাঠাতে সক্ষম হয়েছে।
২০২০ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি আমিরাতের হোপ অরবিটার নামক আকাশ যান মঙ্গলে পৌছে। ২০১৯ সালের ১৯ জুলাই তারা এটি জাপান স্পেস সেন্টার থেকে উৎক্ষেপন করে। যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব কলোরাডো বৌলডার, আরিজোনা স্টেট ইউনিভার্সিটি এবং ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্ণিয়ার সহায়তায় মোহাম্মদ বিন আব্দুর রশিদ স্পেস সেন্টার নির্মাণ করেছে হোপ অরবিটার। সংযুক্ত আরব আমিরাত বর্তমানে বিশ্বের পঞ্চম দেশ, যারা মঙ্গলে স্পেসক্রাফট পাঠিয়েছে।