সামরিক দিক দিয়ে বিশ্বে ভারতের অবস্থান চতুর্থ। ভারত পারমাণবিক শক্তিধর দেশ। ভারতের রয়েছে নিজস্ব উদ্ভাবিত বিভিন্ন পাল্লার শক্তিশালী ব্যালিস্টিক ও ক্রুজ মিসাইল। ভারতের আছে নিজস্ব তৈরি পারমাণবিক শক্তিচালিত সাবমেরিন। রয়েছে স্পেস লঞ্চ সক্ষমতা। এর মাধ্যমে কয়েকশ দেশি-বিদেশি স্যাটেলাইট কক্ষপথে পাঠিয়েছে দেশটি। ভারতের রয়েছে নিজস্ব স্যটেলাইট নেভিগেশন সিস্টেম। জাহাজ নির্মাণ শিল্পে ভারত বেশ সাফল্য লাভ করলেও স্থলবাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ সমরাস্ত্র এবং যুদ্ধবিমানের ক্ষেত্রে ভারত এখনও বিদেশ-নির্ভর। দীর্ঘদিন ধরে ভারত বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম সমরাস্ত্র আমদানিকারক দেশ।
ভারতীয় আর্মির মোট সৈন্য সংখ্যা ৫১ লাখ ২৭ হাজার। এর মধ্যে সক্রিয় সৈন্য সংখ্যা ১৪ লাখ ৪৫ হাজার। রিজার্ভ সৈন্য ১১ লাখ ৫৫ হাজার। প্যারামিলিটারি ২৫ লাখ ২৭ হাজার। ২০২১-২০২২ অর্থবছরে ভারতের সামরিক বাজেট ৬৪ দশমিক ৪৯ বিলিয়ন ডলার।
ভারতের বিমান বাহিনীর মোট বিমানের সংখ্যা ২ হাজার ১১৯টি। এর মধ্যে ফাইটার জেট ৫৪২টি। ডেডিকেটেড অ্যাটাক ১৩০টি। সামরিক পরিবহন বিমান ২৫১টি। প্রশিক্ষণ বিমান ৩৪৫টি। স্পেশাল মিশন ৭০টি। ট্যাঙ্কার ফ্লিট ৬টি। ভারতীয় আর্মির মোট হেলিকপ্টার রয়েছে ৭৭৫টি। এর মধ্যে অ্যাটাক হেলিকপ্টার ৩৭টি।
ভারতে ট্যাঙ্ক রয়েছে ৪ হাজার ৭৩০টি। সাজোয়া যান ১০ হাজার। সেলফ প্রপেল্ড আর্টিলারি ১০০টি। টাউড আর্টিলারি ৪ হাজার ৪০টি। রকেট প্রজেক্টর ৩৭৪টি। ভারতের কাছে থাকা সবচেয়ে শক্তিশালী ট্যাঙ্কের নাম ভিস্ম। এটি রাশিয়ার তৈরি টি-৯০ ট্যাঙ্ক। ভারতে এর নাম দেওয়া হয়েছে ভিস্ম। এতে রয়েছে শক্তিশালী জ্যামিং সিস্টেম। দিনে ও রাতে দেখার পদ্ধতি যুক্ত এই ট্যাঙ্ক ৫ মিটার পানির মধ্যেও চলতে পারে। তিনজন সৈন্য অবস্থান নিতে পারে একটি ট্যাঙ্কে। জ্বালানি ধারণ ক্ষমতা ১ হাজার ৬০০ লিটার। এছাড়া ভারতের কাছে অর্জুন নামক নিজস্ব তৈরি মেইন ব্যাটল ট্যাঙ্ক রয়েছে।
ভারতে মোট রণতরীর সংখ্যা ২৮৫টি। বিমানবাহী রণতরী ১টি। ডেস্ট্রয়ার ১০টি। সাবমেরিন ১৭টি। ফ্রিগেট ১৩টি। করভেট ২৩টি। টহল জাহাজ ১৩৯টি।
ভারতের কাছে থাকা সবচেয়ে শক্তিশালী মিসাইল হলো ব্রাহমস মিসাইল। রাশিয়া এবং ভারত যৌথভাবে তৈরি করে এ মিসাইল। এ মিসাইলকে ভারতের প্রতিরক্ষার মেরুদন্ড বলা হয়। ভারতের সবচেয়ে শক্তিশালী অস্ত্রও গণ্য করা হয় এ মিসাইলকে। যে কোনো প্লাটফর্ম থেকে নিক্ষেপযোগ্য এ মিসাইল ৩ টন ওজনের বোমা বহন করতে পারে। সুপারসনিক এ মিসাইলের গতি শব্দের চেয়ে আড়াই থেকে তিনগুন বেশি। ভারতীয় আর্মি, নেভি এবং এয়ারফোর্স ব্যবহার করে ব্রাহমস মিসাইল।
ভারতের নিজস্ব উদ্ভাবিত শক্তিশালী মিসাইলের মধ্যে রয়েছে পৃত্থী এবং অগ্নি সিরিজ মিসাইল। অগ্নি এবং পৃত্থী দুটিই ব্যালিস্টক মিসাইল। আন্তমহাদেশীয় অগ্নি-৬ এর সর্বোচ্চ লক্ষ্যমাত্রা ৮ থেকে ১০ হাজার কিলোমিটার করার চেষ্টা করছে ভারত। এটি সাবমেরিন এবং ভূমি থেকে নিক্ষেপযোগ্য। ভারতের রয়েছে নিজস্ব উদ্ভাবিত হাইপারসনিক গতির ক্রুজ মিসাইল। পারমাণবিক এবং প্রচলিত উভয় ধরনের বোমা বহন করতে পারে এটি। এর লক্ষ্যমাত্রা ১ হাজার ৯০০ কিলোমিটার। ভারতের কাছে বিভিন্ন পাল্লার আরো যেসব ব্যালিস্টিক ও ক্রুজ মিসাইল রয়েছে সেগুলো হলো নির্ভয় ও প্রহর।
ভারতের নিজস্ব তৈরি শক্তিশালী মিসাইল হলো নাগ মিসাইল ক্যারিয়ার সিস্টেম। এটি একটি এন্টি ট্যাঙ্ক মিসাইল। একটি মিসাইল ক্যারিয়ার ৮টি নাগ মিসাইল বহন করতে পারে। ৩ মাইল দূরের ট্যাঙ্কে হামলা চালিয়ে ধ্বংস করতে পারে এ মিসাইল।
ভারতের নিজস্ব উদ্ভাবিত শক্তিশালী রকেট লাঞ্চার সিস্টেম হচ্ছে পিনাকা রকেট । একটি রকেট সিস্টেম ১২টি রকেট বহন করতে পারে এবং এর লক্ষ্যমাত্রা ৬৫ কিলোমিটার। ৪৪ সেকেন্ডে ১২টি রকেট নিক্ষেপ করতে পারে এবং ৪ মিনিটের মধ্যে পুনরায় রকেট লোড করা যায় এ রকেট লাঞ্চার সিস্টেমে।
ডিফেন্স রিসার্স এন্ড ভেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন ভারতের বিভিন্ন ধরনের মিসাইল উদ্ভাবনের সাথে জড়িত।
ভারতের এয়ার ডিফেন্স-এন্টিএয়ারক্রাফট গান সিস্টেম, ম্যান পোর্টেবল সিস্টেম সোভিয়েত ইউনিয়, যুক্তরাষ্ট্র এবং সুইডেনের তৈরি।
ভারতের কাছে সোভিয়েত ইউনিয়নের এস-২০০ সারফেস টু এয়ার মিসাইল, রাশিয়া এবং ইসরাইলের তৈরি বিভিন্ন ধরনের সারফেস টু এয়ার মিসাইল রয়েছে।
ভারতের নিজস্ব উদ্ভাবিত দুই ধরনের মাঝারি পাল্লার সারফেস টু এয়ার মিসাইল রয়েছে। এ দুটি হলো আকাশ এবং কিউআরএসএএম।
পাকিস্তান এবং চীনের ব্যালিস্টিক মিসাইল আক্রমন প্রতিহত করার জন্য ভারত উদ্ভাবন করেছে পৃত্থী নামে দুই ধরনের ব্যালিস্টিক মিসাইল ডিফেন্স সিস্টেম।
ভারত ফ্রান্স এবং রাশিয়ার সাথে যৌথভাবে এন্টি ট্যাঙ্ক গাইডেড মিসাইল নির্মাণ করে। এ ছাড়া তার কাছে রাশিয়া ও ইসরাইলের তৈরি কয়েক ধরনের এন্টি ট্যাঙ্ক গাইডেড মিসাইল রয়েছে।
ভারতের নিজস্ব তৈরি রকেট লঞ্চার, ফিল্ড গানসহ সোভিয়েত ইউনিনের তৈরি বিভিন্ন ধরনের রকেট লঞ্চার ও ফিল্ড গান রয়েছে।
ভারতের সবচেয়ে শক্তিশালী যুদ্ধবিমান হলো ফ্রান্সের তৈরি ফোর প্লাস জেনারেশন ড্যাসল্ট রেফালে মাল্টি রোল ফাইটার জেট। রেফালের পর ভারতের শক্তিশালী যুদ্ধবিমান হলো এসইউ-৩০ এমকে। এ ছাড়া নেপুচন, ফ্যাকন নামে শক্তিশালী যুদ্ধবিমান রয়েছে ভারতে। ফ্যাকন বিমানে রয়েছে শক্তিশালী এয়ারবর্ণ আর্লি ওয়ার্নিং এন্ড কন্ট্রোল সিস্টেম। অনেক দূরের বিমান, জাহাজ এবং সমরযান সনাক্ত করতে পারে এ বিমান। ভারতের কাছে থাকা অন্যতম শক্তিশালী য্দ্ধু বিমান এটি। এ ধরনের তিনটি রাডার সিস্টেমের বিমান রয়েছে ভারতের। এ রাডার সিস্টেম ইসরাইলের তৈরি।
ভারতের কাছে বর্তমানে ২১টি রেফালে ফাইটার জেট রয়েছে। মোট ৩৬টি রেফালে ক্রয়ের অর্ডার দিয়েছে ভারত এবং বাকি বিমানও এ বছরের শেষ নাগাদ ডেলিভারির কথা রয়েছে।
রাশিয়ার কাছ থেকে লাইসেন্স নিয়ে ভারতের হিন্দুুুুুুুস্তান এরোনটিক্স লিমিটেড তৈরি করছে এসইউ-৩০ এমকে । ভারতের বিমান বাহিনীতে বর্তমানে ২৭২টি বেশি এসইউ-৩০ বিমান রয়েছে। তিন শতাধিক এ বিমান ভারতের বিমান বাহিনীতে যুক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে। এর মাধ্যমে ভারত হবে এ বিমানের সবচেয়ে বড় ব্যবহারকারী দেশ। এটি চতুর্থ প্রজন্মের বিমান।
ভারতের কাছে ফ্রান্সের ৪৫টি মিরেজ২০০০, রাশিয়ার তৈরি ১০৯টি মিগ-২৯, ৫৪টি মিগ-২১ বিমান রয়েছে। এ ছাড়া ভারতের কাছে তাদের নিজস্ব তৈরি তেজাস ফাইটার জেট রয়েছে ২২টি, বৃটেনের তৈরি গ্রাউন্ড অ্যাটাক জাগুয়ার রয়েছে ৯১টি।
ভারতের কাছে ৮টি বোয়িং পি-৮ পজিডনসহ ৪১টি মেরিটাইম টহল বিমান রয়েছে। গোয়েন্দা, পর্যবেক্ষন কাজের জন্য ভারতের কাছে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলের তৈরি ৫টি বিমান। সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং ব্রাজিলের তৈরি এয়ারবর্ণ আর্লি ওয়াণিং এন্ড কন্ট্রোল সিস্টেম রয়েছে ৫টি। সোভিয়েত ইউনিয়ন ও বৃটেনের তৈরি ইলেকট্রনিক ওয়ারফেয়ার রয়েছে ৯টি।
ভারতের কাছে রয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি শক্তিশালী এপাচি ও চিনুক হেলিকপ্টার । ভারতের হিন্দুস্তান এরোনটিক্স লিমিটেড প্রশিক্ষণ বিমান, অ্যাটাক ও ইউটিলিটি হেলিকপ্টার নির্মাণ করতে সক্ষম। বর্তমানে এ প্রতিষ্ঠান ৬৫টি অ্যাটাক হেলিকপ্টার নির্মাণের অর্ডার পেয়েছে।
হিন্দুস্তান এরোনটিক্স নির্মিত ৭৮টি প্রশিক্ষণ বিমান রয়েছে ভারতের। এ ছাড়া ধ্রুব, চিতা, রুদ্র ও কিরন নামে প্রায় ৫শ নিজস্ব তৈরি ইউটিলিটি হেলিকপ্টার রয়েছে তিন বাহিনীর কাছে। আরো দুই শতাধিক ইউটিলিটি হেলিকপ্টার নির্মাণের অর্ডার রয়েছে হিন্দুস্তান এরোনটিক্স লিমিটেড আর কাছে।
ভারতের সবচেয়ে শক্তিশালী রণতরী হলো বিক্রমাদিত্য নামক বিমানবাহী রণতরী এবং কলকাতা ক্লাস ডেস্ট্রয়ার। বিক্রামদিত্য ভারতের একমাত্র বিমানবাহী রণতরী। এটি রাশিয়ার কাছ থেকে ক্রয় করেছে ভারত। কলকাতা ক্লাস ডেস্ট্রয়ার হলো ভারতের নিজস্ব তৈরি প্রথম আধুনিক শক্তিশালী যুদ্ধজাহাজ। ৩০০ কিলোমিটার দূরের লক্ষ্যবস্তুতে নিখুতভাবে আঘাত করতে পারে এ রণতরীর মিসাইল। কলকাতা ক্লাস ডেস্ট্রয়ারের সংখ্যা তিনটি।
ভারতের নিজেদের তৈরি আরেকটি ডেস্ট্রয়ার হলো দিল্লি ক্লাস। দিল্লি ক্লাস ডেস্ট্রয়ারের সংখ্যাও তিনটি। এ ছাড়া ভারতের কাছে রাশিয়ার তৈরি রাজপুত ক্লাস ডেস্ট্রয়ার রয়েছে ৪টি।
ভারতের কাছে যেসব ফ্রিগেট রয়েছে তার সাতটি তাদের নিজেদের তৈরি। বাকিগুলো রাশিয়ার। এছাড়া ভারতের সকল করভেট নিজেদের তৈরি।
জাহাজ নির্মাণ শিল্পে ভারত বেশ উন্নতি লাভ করেছে। ভারত পারমাণবিক শক্তিচালিত সাবমেরিন নির্মাণে সক্ষম। ২০১৬ সালে আইএনএস আরিহান্ট নামক ভারতের নিজস্ব তৈরি প্রথম নিউক্লিয়ার সাবমেরিন সার্ভিসে যুক্ত হয়েছে। এটি একটি কৌশলগত ব্যালিস্টিক মিসাইল সাবমেরিন। ভারত মোট দুটি আইএনএস আরিহান্ট নির্মাণ করেছে। অপরটি এ বছরের শেষ নাগাদ সার্ভিসে যুক্ত হওয়ার কথা রয়েছে। ভারতের নিউক্লিয়ার সাবমেরিনের নির্মাতা নেভি শিপবিল্ডিং সেন্টার, বিশাখাপত্তম।
ভারতের কাছে সাতটি সাবমেরিন রয়েছে যা ভারত ফ্রান্স এবং জার্মানির সাথে যৌথভাবে নির্মাণ করেছে। তবে এগুলো নিউক্লিয়ার সাবমেরিন নয়।
ভারতের রয়েছে নিজস্ব তৈরি ৫টি ল্যান্ডিং শিপ ট্যাঙ্ক। এগুলো মাগার ক্লাস এবং শারদুল ক্লাসের। এর নির্মাতা হিন্দুস্তান শিপ ইয়ার্ড লিমিটেড এবং গার্ডেন রিচ শিপ বিল্ডারস এন্ড ইঞ্জিনিয়ার্স। এ ছাড়া রয়েছে নিজস্ব তৈরি ৮টি ল্যান্ডিং ক্রাফট।
ভারতের নিজস্ব তৈরি সাতটি ফ্রিগেট শিবালিক ক্লাস, ব্রক্ষ্মপুত্র ক্লাস এবং গোদাবারি ক্লাস । এগুলোর নির্মাতা মাজাগন ডক লিমিটেড এবং গার্ডেন রিচ শিপ বিল্ডারস এন্ড ইঞ্জিনিয়ার্স। ভারতের করভেটেরও নির্মাতা এ দুটি প্রতিষ্ঠান।
ভারতের কাছে ১৩০টির মতো পারমাণবিক বোমা মজুদ রয়েছে। এই বোমা নিক্ষেপের জন্য বিভিন্ন ধরনের মিসাইল ছাড়াও বিমান এবং সাবমেরিন থেকে নিক্ষেপের ব্যবস্থা রয়েছে।