সাবেক জনপ্রিয় মার্কিন প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডি বলেছেন, যদি কেউ পানির সমস্যা সমাধান করতে পারে তবে সে দু’টি বিষয়ে নোবেল পুরস্কার পাবে একটি শান্তি এবং অপরটি বিজ্ঞান।
আমারা কি জানি পৃথিবীতে যে বিপুল জলরাশি রয়েছে তার মাত্র এক ভাগ পানি ব্যবহারের উপযুক্ত? বিপুল এ পানিরাশির ৯৭ ভাগই লবণাক্ত বা পানের অনুপযুক্ত। ২ ভাগ পানি বরফ অবস্থায় রয়েছে মেরু অঞ্চলে। বাকি যে এক ভাগ পানি রয়েছে তার মাধ্যমেই মানুষসহ মিঠাপানিনির্ভর অন্যান্য প্রাণী বেঁচে আছে। পান করা ছাড়া এই এক ভাগ মাত্র পানি দিয়েই বিশ্বের সব চাষাবাদের কাজ চলছে। চলছে শিল্পকারখানা।
মাত্র ছয়টি দেশ বিশ্বের অর্ধেক মিঠাপানির অধিকারী ব্রাজিল, কানাডা, চীন, কলম্বিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও রাশিয়া। জাতিসঙ্ঘের তথ্য অনুযায়ী ২০২৫ সাল নাগাদ ২৮০ কোটি মানুষ সুপেয় পানির সঙ্কটে পড়বে। আগামী ১০ বছরে যুক্তরাষ্ট্রের ৩৬টি রাজ্যে মিঠাপানির সঙ্কট দেখা দেবে। প্রতি ২০ বছরে পানির চাহিদা দ্বিগুণ বাড়ে। অপর একটি সূত্রের তথ্য মতে, বর্তমানে বিশ্বে তিন ভাগের এক ভাগ মানুষ নিরাপদ পানির সমস্যায় আছে। ২০২৫ সাল নাগাদ তিন ভাগের দুই ভাগ মানুষ এ সমস্যায় পড়বে।
যুক্তরাষ্ট্রের ড. পিটার এইচ গ্লিক তার ‘ওয়াটার ইন ক্রাইসিস’ বইয়ে বলেছেন, বিশ্বে ১০০ কোটি মানুষ নিরাপদ পানি পায় না। আড়াই শ’ কোটি মানুষের নিরাপদ স্যানিটেশনের ব্যবস্থা নেই। ২০০ কোটি মানুষ বছরে পানিসংক্রান্ত রোগে মারা যায় যা ঠেকানো সম্ভব।
একটি বার্গার তৈরিতে ৬০০ গ্যালন
পানি লাগে?
আপনি কি জানেন ফাস্টফুডের দোকান থেকে যে হামবার্গারটি আপনি খেলেন তার পেছনে কী পরিমাণ পানি খরচ হয়েছে? উত্তর : ৬০০ গ্যালন। হামবার্গারের জন্য লাগে গম আর গরুর গোশত। একটি হামবার্গারে যে পরিমাণ গম দরকার সে গম চাষ এবং গরু পালনের পেছনে এ পানি খরচ হয়। এক কাপ কফির পেছনে খরচ হয় ৭৪ গ্যালন পানি।
শাকসবজি এবং ফলমূলজাতীয় খাবারের চেয়ে ফাস্টফুড এবং প্যাকেটজাত খাবারের উপাদান তৈরিতে অধিক পানি খরচ হয়।
দিনে কে কত গ্যালন পানি খরচ করে
যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় একজন নাগরিক গড়ে দিনে ১৫০ গ্যালন পানি ব্যবহার করে। যুক্তরাজ্যে ৩০ গ্যালন এবং কেনিয়ায় দিনে মাত্র ৩ গ্যালন।
বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার হিসাব অনুযায়ী একজন মানুষের দিনে গড়ে কমপক্ষে ১৩ গ্যালন পানির দরকার। এর মধ্যে ১০ ভাগ পান করা, ৪০ ভাগ স্যানিটেশন, ৩০ ভাগ গোসল এবং ২০ ভাগ রান্নায় দরকার।
ভবিষ্যৎ যুদ্ধ হবে পানি নিয়ে
বিশেষজ্ঞদের মধ্যে আগামীতে বিশ্বে যদি কোনো যুদ্ধ বাধে তবে তা হবে পানি নিয়ে যুদ্ধ। পানির ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা নিয়ে যুদ্ধ। নদী দখলের যুদ্ধ। বিশ্বে ২৬০টি নদী রয়েছে যা একাধিক দেশের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে এ নদীর পানি নিয়ন্ত্রণ নিয়ে অতীতে অনেক যুদ্ধ-সঙ্ঘাত হয়েছে। পানির চাহিদা ভবিষ্যতে বৃদ্ধির সাথে সাথে এ সঙ্ঘাত আরো ঘনীভূত হবে। এক হাজার কিলোমিটারের বেশি লম্বা বিশ্বের এ রকম নদী আছে ১৬৯টি।
পানির ওপর বিভিন্ন শক্তিশালী দেশের নিয়ন্ত্রণ আরোপ এবং পানির গুরুত্ব দিন দিন বাড়ার ফলে পানি বিষয়ে এখন একটি জনপ্রিয় স্লোগান হচ্ছে ‘ওয়াটার ইজ এ হিউম্যান রাইট নট এ কমোডিটি’। পানি পাওয়ার অধিকার একটি মানবাধিকার। এটি কোনো পণ্য নয়।