পেন্টাগনের কথা

-

  • আনোয়ার হোসেইন মঞ্জু
  • ০৩ মার্চ ২০১৯, ১২:১৬


’পেন্টাগন’ শব্দটি সমগ্র বিশ্বে রাজনীতিসচেতন সব মানুষের কাছে পরিচিত। বিশ্বে যেখানেই যুদ্ধ, তা সশস্ত্র যুদ্ধই হোক আর স্নায়ুযুদ্ধই হোক, সেখানেই যে পেন্টাগনের সংশ্লিষ্টতা থাকে সে সম্পর্কে কারো সন্দেহ থাকার কথা নয়। বিশ্বের কোথায় যুদ্ধ বাধাতে হবে, কোথায় যুদ্ধ থামাতে হবে, কী ধরনের অস্ত্র উৎপাদন করতে হবে এবং কোন দেশের কাছে তা বিক্রি করতে হবে, কোন দেশে গোয়েন্দা তৎপরতা চালাতে হবে সব কিছুই পেন্টাগন থেকে নিয়ন্ত্রিত হয়, এ কথা বললে বোধহয় বাড়িয়ে বলা হবে না। কোনো দেশের সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহীদের অস্ত্র সরবরাহের ক্ষেত্রেও পেন্টাগনের ভূমিকা উল্লেখযোগ্য।


বিশ্ববাসীর কাছে পেন্টাগন এক রহস্য এবং অজানা আশঙ্কার উৎস হলেও পেন্টাগন সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্রের লোকজন মোটামুটিভাবে একটা ধারণা রাখে এবং এটি যেহেতু বছরজুড়ে নিয়মিত সংবাদ শিরোনাম হয়, সে কারণেও পেন্টাগন কখনো আলোচনার বাইরে থাকে না। পেন্টাগন যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে অবস্থিত দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রালয়ের সদর দফতর, যেখানে কাজ করেন ২৩ হাজার সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তা ও কর্মচারী, যারা যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষাবিষয়ক সব কিছুর পরিকল্পনা তৈরি ও বাস্তবায়নের সাথে জড়িত। এর অতিরিক্ত আরো তিন হাজার সহায়ক জনশক্তি এখানে কর্মরত।


এটি আমেরিকান সামরিক স্থাপনার প্রতীক, যার অবয়বই বলে দেয় ভবনের গুরুত্ব। ভবনের সুবিশাল আকৃতি, চমৎকারিত্ব ও নির্মাণ জটিলতার কারণে পেন্টাগন ছোটখাটো একটি শহরের সাথে তুলনীয়। বিশ্বের অন্যতম বিশাল অফিস ভবন এটি, যা শিকাগোর মার্চেন্ডাইজ মার্টের আয়তনের দ্বিগুণ এবং নিউইয়র্কের এম্পায়ার স্টেট বিল্ডিংয়ের সব তলার মেঝের মোট আয়তনের তিন গুণ। ওয়াশিংটন ডিসি’র ’ক্যাপিটল হিল’ নামে পরিচিত বিশাল হাউজ অব কংগ্রেস ভবনটি পেন্টাগনের পাঁচটি বাহুর একটিতেই এটে যাবে। প্রতিটি বাহুর দৈর্ঘ্য ৯২১ ফুট করে।


পেন্টাগন শব্দটি গ্রিক অক্ষর ‘৫’ অর্থাৎ ‘pente’ থেকে উৎসারিত, যার অর্থ পাঁচ কোণ বা দিকবিশিষ্ট। পুরো পেন্টাগন কমপ্লেক্সটি ৫৮৩ একর জায়গার ওপর অবস্থিত, যার মধ্যে ৬৭ একর আয়তনের ১৬টি পার্কিং লট রয়েছে, যেখানে প্রতি কর্মদিবসে প্রায় আট হাজার ৭৭০টি গাড়ি পার্ক করা হয় এবং পার্কিং লটে আসতে গাড়িগুলোকে ২০০ একর আয়তনবিশিষ্ট উদ্যান এলাকা অতিক্রম করতে হয়। ৬৫ লাখ বর্গফুট আয়তনের মূল ভবন পাঁচতলাবিশিষ্ট হলেও বেসমেন্টে অর্থাৎ ভূগর্ভে আরো দু’টি তলা রয়েছে এবং এর মধ্যে ৩৭ লাখ পাঁচ হাজার ৭৯৩ বর্গফুট এলাকা অফিসের কাজের জন্য ব্যবহৃত হয়। ভবনে রয়েছে ১৩১টি সিঁড়ি, ১৯টি অ্যাসকেলেটর, ২৮৪টি বাথরুম, সাত হাজার ৭৫৪টি জানালা। ভবনের বিভিন্ন স্থানে চার হাজার ২০০টি ঘড়ি লাগানো আছে। পেন্টাগনে আছে একটি ডাইনিং রুম, দু’টি ক্যাফেটেরিয়া, ছয়টি স্ন্যাকবার এবং একটি আউটডোর স্ন্যাকবার এবং প্রতি কর্মদিবসে ২৩০ জন কর্মী সেখানকার কর্মচারী ও দর্শনার্থীদের জন্য খাবার পরিবেশন করেন। কিছু সংরক্ষিত স্থান ছাড়া পেন্টাগন দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত এবং বছরে প্রায় ১০ লাখ দর্শনার্থী পেন্টাগন পরিদর্শন করেন।


মাঝখান খোলা পাঁচ একর জায়গাসহ মোট ২৮.১ একর জায়গার ওপর প্রতিষ্ঠিত পেন্টাগন নির্মাণকৌশল এত চমৎকার যে, বিশালত্ব সত্ত্বেও ভবনের এক অংশ থেকে আরেক অংশে যেতে মাত্র ১০ মিনিট সময় লাগে। যে ভবনে মার্কিন সশস্ত্র বাহিনীর প্রতিটি শাখা অর্থাৎ সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমান বাহিনী ও মেরিন এবং তাদের গোয়েন্দা ও নিরাপত্তা সংগঠনগুলোর কাজ সমন্বয় করা হয়, সেখানে সুষ্ঠুভাবে কাজ সম্পাদনের জন্য দ্রুততা নিশ্চিত করা হয়েছে। প্রতি তলায় কড়িডোর রয়েছে, যার মোট আয়তন সাড়ে ১৭ মাইল।


১৯৪১ সালে পেন্টাগন নির্মাণের পরিকল্পনাটি মাথায় আসে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ব্রেহন সমারভেলের, যিনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন ওই সময়ে ১৭টি বিভিন্ন ভবনে অবস্থিত প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের দফতরে কাজের সমন্বয়হীনতা ও স্থানাভাবের কারণে একটি নতুন ভবনে প্রতিরক্ষা দফতর স্থানান্তরের কথা ভাবেন। ওই বছরের ১৪ আগস্ট কংগ্রেস নতুন ভবনের জন্য ৮৩ মিলিয়ন ডলার বরাদ্দ দেয়ার পর ১১ সেপ্টেম্বর পেন্টাগনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয় এবং মাত্র দুই বছরের মধ্যে তখনকার ওয়াশিংটন ডিসি’র উপকণ্ঠে, আর্লিংটন ফার্ম নামে পরিচিত জায়গায় নির্মিত হয় অতিকায় এই ভবনটি। পাঁচটি রাস্তার ঠিক কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত বলে ভবনটিকে পাঁচ বাহুবিশিষ্ট করা হয়েছে বলে অনেকে মনে করেন।


পেন্টাগনের ডিজাইন করেন আমেরিকান স্থপতি জর্জ বার্গস্ট্রম এবং নির্মাণকাজের জন্য দায়িত্ব লাভ করেছিল ফিলাডেলফিয়ার নির্মাণ সংস্থা জন ম্যাকশেইন ইনকরপোরেটেড, যে প্রতিষ্ঠানটি ইতঃপূর্বে ওয়াশিংটন ন্যাশনাল এয়ারপোর্ট, জেফারসন মেমোরিয়াল, ন্যাশনাল নেভাল মেডিক্যাল সেন্টারের মতো বড় প্রকল্প সম্পন্ন করেছে। পুরো প্রকল্প তদারকির দায়িত্ব ছিল সেনাবাহিনীর কর্নেল লেসলি গ্রোভসের ওপর। এর স্থাপত্য কৌশল নিও ক্ল্যাসিক্যাল ধাঁচের, যার বাস্তব রূপ দিতে ছয় ৮০ হাজার টন বালুর প্রয়োজন পড়েছে রিইনফোর্সড কংক্রিট তৈরি করতে, কংক্রিট পাইলস লেগেছে ৪১ হাজার ৩৯২টি। শুধু দৃষ্টিনন্দন স্থাপত্যের দিকেই যে খেয়াল রাখা হয়েছে তা নয়, নির্মাণসামগ্রী যাতে কম লাগে সেদিকেও দৃষ্টি ছিল স্থপতি ও প্রকৌশলীদের। তারা যে পরিমাণ ইস্পাত সাশ্রয় করতে পেরেছিলেন, তা দিয়ে একটি যুদ্ধজাহাজ তৈরি করা সম্ভব ছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ইস্পাতের ঘাটতি ছিল বলে এই সাশ্রয়ের নীতি গ্রহণ করা হয়েছিল। ভবনটি যাতে প্রতি বর্গফুট জায়গায় ১৫০ পাউন্ড ওজন বহন করতে সক্ষম হয়, তা নিশ্চিত করা হয়েছিল, কারণ যুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে দলিলপত্র সংরক্ষণে যেন কোনো সমস্যা না হয়। নির্মাণকাজ যখন গতি পায় তখন এক হাজার স্থপতি ও প্রকৌশলী কাজকে নিখুঁতভাবে সম্পন্ন করার জন্য যখন যে অংশের নির্মাণ চলছিল সেই অংশের ডিজাইনের প্রিন্ট সরবরাহ করছিলেন ১৪ হাজার নির্মাণ শ্রমিক ও কারিগরদের কাছে। প্রতিদিন কাজ হতো তিন শিফটে।


নির্মাণকাজ এত দ্রুত চলছিল যে, একপর্যায়ে প্রকৌশলীরা প্রয়োজন অনুযায়ী ডিজাইন সরবরাহ করতে পারছিলেন না। জাপানিরা পার্ল হারবারে হামলা করার পর পেন্টাগনের কাজের গতি আরো বৃদ্ধি পায়। ব্রিগেডিয়ার সমারভেল ১৯৪২ সালের ১ এপ্রিলের মধ্যে ভবনের দশ লাখ বর্গফুট ব্যবহারোপযোগী জায়গার নির্মাণ সম্পন্ন করার নির্দেশ দেন। অবশ্য ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের ১৬ মাস পর ১৯৪৩ সালের ১৫ জানুয়ারি পেন্টাগন উদ্বোধন করা হয়।


ষাটের দশকের শেষ দিকে ভিয়েতনাম যুদ্ধের সময় পেন্টাগন যুদ্ধবিরোধী প্রতিবাদের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়। ১৯৬৭ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি দুই হাজার ৫০০ মহিলা প্রতিরক্ষামন্ত্রী রবার্ট ম্যাকনামারার অফিসের বাইরে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। সে বছরের মে মাসে ২০ জন বিক্ষোভকারী জয়েন্ট চিফস অব স্টাফের অফিসের সামনে অবস্থান গ্রহণ করেন এবং গ্রেফতার করার আগে তাদের অবস্থান চার দিন স্থায়ী ছিল। একই বছরের ২১ অক্টোবর ৩৫ হাজার যুদ্ধবিরোধী বিক্ষোভকারী প্রতিরক্ষা দফতরের সামনে বিক্ষোভের জন্য সমবেত হয়ে মুখোমুখি হয় দুই হাজার ৫০০ সশস্ত্র সৈনিকের। ১৯৭২ সালের ১৯ মে ‘ওয়েদার আন্ডারগ্রাউন্ড অর্গানাইজেশন’ নামে আমেরিকান উগ্রপন্থী দলের সদস্যরা পেন্টাগনের চতুর্থ তলার এক বাথরুমে একটি বোমা স্থাপন করলে সেটি বিস্ফোরিত হয়। তারা ঘোষণা করে যে, নিক্সন প্রশাসন কর্তৃক হ্যানয়ে বোমা হামলার প্রতিবাদেই পেন্টাগনে বোমার বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে। ২০০৭ সালের ১৭ মার্চ প্রায় ১৫ হাজার বিক্ষোভকারী ইরাকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ অব্যাহত রাখার প্রতিবাদে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে।১৯৯৮ সালে পেন্টাগনে বড় ধরনের সংস্কার ও সৌন্দর্য বর্ধনের কাজ হাতে নেয়া হয়, যা ২০১০ সালে শেষ হয়েছে।


হিটলার যখন ইউরোপের অধিকাংশ স্থান দখলে নিয়ে আকস্মিকভাবে সোভিয়েত ইউনিয়নের ওপর হামলা করে বসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট রুজভেল্ট নাৎসিদের অগ্রগতিতে শঙ্কিত হয়ে পড়েন এবং দেশে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেন। ওয়াশিংটনে ওয়ার ডিপার্টমেন্টে তখন ২৪ হাজার লোক কাজ করছিল ১৭টি পৃথক ভবন থেকে, যেগুলোকে সমন্বিত করার জন্য ছয় মাসের জন্য নির্মাণাধীন পেন্টাগনের পাঁচ লাখ বর্গফুট স্থান প্রস্তুত করার নির্দেশ দেয়া হয়। পরবর্তী এক বছরের মধ্যে পেন্টাগনের অবশিষ্ট কাজ সম্পন্ন হয়।


২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর যেদিন নিউইয়র্কের টুইন টাওয়ারে হামলা হয়, সেদিন আমেরিকান এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট-৭৭, যেটি ওয়াশিংটনের ডালেস এয়ারপোর্ট থেকে লসএঞ্জেলেস যাওয়ার কথা সেটি পেন্টাগনের পশ্চিম দিকে আঘাত হানে। বিমানটির ৬৪ জন যাত্রী ও ক্রু এবং পেন্টাগনের ১২৫ জন অর্থাৎ মোট ১৮৯ জন লোকের প্রাণহানি ঘটে। বিমানের আঘাতে ভবনের মারাত্মক ক্ষতি সাধিত হয়। পেন্টাগনে তখন যেহেতু সংস্কারকাজ চলছিল, সে কারণে ধ্বংসপ্রাপ্ত অংশের অধিকাংশ অফিস খালি পড়ে ছিল। ফলে হতাহত তুলনামূলকভাবে কম হয়েছে। ওই অংশে কর্মরত আট হাজার ৫০০ মানুষের মধ্যে সেদিন মাত্র ৮০০ লোক কাজ করছিল। সংস্কারকাজে নিয়োজিত ঠিকাদারদের ওপর বাড়তি কাজ পড়ল ধ্বংসপ্রাপ্ত অংশ পুনর্নির্মাণের। পুনর্নির্মিত স্থানে ভবনের অভ্যন্তরভাগে নিহতদের স্মৃতিতে একটি ফলক স্থাপন করা হয়। তা ছাড়া প্রতি বছর ১১ সেপ্টেম্বর প্রত্যেক নিহতের স্মরণে একটি করে বাতি জ্বালানোর ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। ওই দিন পেন্টাগনের ক্ষতিগ্রস্ত অংশে একটি আমেরিকান পতাকা ঝুলিয়ে দেয়া হয় এবং রাতে নীল বাতি দিয়ে সাজানো হয়। হামলার ঘটনার পর পেন্টাগনের বাইরে দুই একর জায়গাজুড়ে একটি স্মৃতিসৌধ নির্মাণের পরিকল্পনা নেয়া হয়, যার মধ্যে আছে প্রত্যেক নিহতের স্মরণে একটি করে বেঞ্চ স্থাপন। এটি দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়েছে ২০০৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর।


চলতি বছরের ৪ মার্চ বিকেলে পেন্টাগন ফোর্স প্রটেকশন এজেন্সির দু’জন পুলিশ অফিসার, যারা পেন্টাগনের প্রবেশপথে ছিলেন তাদের লক্ষ্য করে গুলি করা হয়। তারাও সন্দেহভাজনকে গুলি করে আহত করে এবং হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়। গত ১৯ অক্টোবর অজ্ঞাত বন্দুকধারী ভবনের দক্ষিণ দিকে তৃতীয় ও চতুর্থ তলার জানালা লক্ষ্য করে গুলি ছুড়লে জানালার কাচ ক্ষতিগ্রস্ত হয়, কিন্তু গুলি কাচ ভেদ করে ভেতরে প্রবেশ করতে পারেনি। জানালার পাশের অফিসগুলো ফাঁকা ছিল সংস্কারকাজ চলছিল বলে। জয়েন্ট টেরোরিজম টাস্কফোর্স ঘটনার তদন্ত করছে।


দর্শনার্থীদের প্রবেশের জন্য পেন্টাগনের দক্ষিণ-পূর্ব প্রবেশপথটি ব্যবহৃত হয়, যেখানে পেন্টাগন মেট্রো স্টেশন ও বাস স্টপেজ রয়েছে। একই পাশে দোতলায় রয়েছে একটি খোলা জায়গা, যেখানে একটি ছোট শপিং মলও আছে। ভবনটি নির্মাণে ইতালির কোনো মার্বেল পাথর ব্যবহার করা হয়নি, যদিও ইতালি ছিল মার্বেল পাথর আমদানির অন্যতম উৎস। কারণ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে ইতালি ছিল যুক্তরাষ্ট্রের শত্রু দেশ।


পেন্টাগনের দক্ষিণ পাশে বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে রয়েছে ওয়াশিংটনের অভিজাত শপিং এরিয়া পেন্টাগন সিটি এবং আর্লিংটনের ঘনবসতিপূর্ণ আবাসিক এলাকা ক্রিস্টাল সিটি। উত্তর দিকে আর্লিংটন ন্যাশনাল সিমেট্রি। ওয়াশিংটন মেট্রো পেন্টাগন স্টেশনও পেন্টাগনেই, যেখানে ব্লু ও ইয়েলো লাইনের মেট্রো ট্রেন যাত্রাবিরতি করে। যুক্তরাষ্ট্রের পোস্টাল সার্ভিস শুধু পেন্টাগনের জন্য পাঁচটি জিপ কোড বরাদ্দ দিয়েছে এবং সেগুলো ওয়াশিংটন ডিসির অন্তর্ভুক্ত, যদিও পেন্টগন প্রকৃতপক্ষে ভার্জিনিয়ার মধ্যে পড়ে।
পেন্টাগনের নিরাপত্তা রক্ষার দায়িত্ব পেন্টাগন ফোর্স প্রটেকশন এজেন্সির ওপর, যা ফেডারেল পুলিশ অফিসার, পেন্টাগন পুলিশ, বেসামরিক সিবিআরএন টেকনিশিয়ান, সন্ত্রাসবিরোধী তদন্ত ও নিরাপত্তা দলের সদস্যদের নিয়ে গঠিত। এই এজেন্সি গঠন করা হয়েছে ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বরে হামলার পর।


যুক্তরাষ্ট্রে যতগুলো বিখ্যাত ফাস্ট ফুড কোম্পানি রয়েছে তার প্রায় সবগুলোর আউটলেট রয়েছে পেন্টাগনে। ২০০৩ সালে চালু হয়েছে কেন্টাকি ফ্রায়েড চিকেন, পিজ্জা হাট ও টাকো বেল রেস্টুরেন্ট। সেন্টার কোর্টইয়ার্ড ক্যাফে চালু হয়েছে ২০০৮ সালে, যেখানে আগে ছিল ’গ্রাউন্ড জিরো ক্যাফে’। ১৯৯৮ সালে পেন্টাগনের সংস্কারকাজ হাতে নেয়ার আগে বাথরুম ব্যবহারে বর্ণবৈষম্য চালু ছিল অর্থাৎ শ্বেতাঙ্গ ও কৃষ্ণাঙ্গদের পৃথক বাথরুম ব্যবহার করতে হতো, এখন আর তা হয় না।


পেন্টাগন অ্যাথলেটিক সেন্টার চালু করা হয়েছে ২০০৪ সালে, যেটি সেখানে কর্মরত সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তারা ব্যবহার করতে পারে। প্রতি বছর পেন্টাগনের মাঠে মেরিন কোর আয়োজন করে থাকে ম্যারাথন এবং সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে আয়োজন করা হয় দশ মাইল দীর্ঘ দৌড় প্রতিযোগিতার।


পেন্টাগনে দর্শনার্থীদের জন্য গাইডেড ট্যুরের ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে ১৯৭৬ সালে, আমেরিকান ফেডারেশনের দ্বিশতবার্ষিকী উপলক্ষে। ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বরে পেন্টাগনে হামলার পর সাময়িকভাবে এই ট্যুর স্থগিত রাখা হলেও পরে তা আবার চালু হয়েছে।