ভাইরাস বলতে এখন বোঝায় এমন ছোট রোগ উৎপাদক জীবানু যাদের দেহে প্রধানত প্রোটিন ও নিউক্লিয় এসিড দ্বারা গঠিত। নিউক্লিক অ্যাসিড অনুসারে ভাইরাসদের দুটি বড় ভাগে ভাগ করা যায়। এক ভাগকে বলা হয় রাইবো ভাইরাস। আর এক ভাগকে বলা হয় ডিঅক্সিরাইবো ভাইরাস। ইংরেজিতে সংক্ষেপে বলে আরএনএ (RNA) ভাইরাস এবং ডিএনএ (DNA) ভাইরাস।
আমাদের দেশে গুটিবসন্ত ছিল একটা ভয়াবহ ব্যাধি। গুটিবসন্ত ছিল ভাইরাসজনিত ব্যাধি। এর ভাইরাস ছিল ডিঅক্সি নিউক্লিক অ্যাসিড ঘটিত। গুটিবসন্ত রোগের ভাইরাস ধ্বংস করা সম্ভব হয়েছে। গুটিবসন্ত তাই আর এখন কোথাও হচ্ছেনা। ১৯৭৭ সালের ১৪ ডিসেম্বর বাংলাদেশ থেকে গুটিবসন্তের ভাইরাস নির্মূল করা গিয়েছে। আরএনএ ভাইরাস-এর কারণে আমাদের হয় ইনফ্লুয়েঞ্জা জ্বর। আমাদের দেশে ইনফ্লুজেঞ্জা একটা মারাত্মক ব্যাধি নয়। শীতপ্রধান দেশে এতে অনেক লোকের মৃত্যু হতে দেখা যায়। সর্দি হয় এক প্রকার আরএনএ ভাইরাস-এর জন্য। সর্দি কোন মারাত্মক ব্যাধি নয়।
চীনে করোনা জ্বর মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। অনেক লোকের মৃত্যু হচ্ছে এতে। করোনা জ্বর উৎপাদক ভাইরাস আর সর্দির ভাইরাস একই শ্রেণীভূক্ত। তাই প্রশ্ন উঠেছে, হঠাৎ করে করোনা জ্বর উৎপাদক ভাইরাস এত মারাত্মক প্রকৃতির হয়ে উঠল কেন? গুজব রটেছে, চীন করোনা ভাইরাসে পরিবর্তন বা মিউটিশন ঘটিয়ে তৈরি করেছে জীবাণু অস্ত্র। যা কোনভাবে চীনের অস্ত্রাগার থেকে অসাবধানতাবশত ছড়িয়ে পড়েছে বাইরে। সৃষ্টি হতে পেরেছে করোনা জ্বরের ভয়াবহ মহামারী। এই জ্বর হয় মানুষের। হয় আরো কিছু স্তন্যপায়ী প্রাণীর। জ্বরটা পাখিদেরও হয়। পাখিদের মাধ্যমে এই ভাইরাসকে ছড়িয়ে দেওয়া যেতে পারে শত্রুপক্ষের সৈন্যদের মধ্যে। একজন থেকে আর এক জনে সংক্রমিত হতে পারে রোগাক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচির মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া শ্লেষ্মা বিন্দুর মাধ্যমে। তাই চীনে মানুষকে চলতে দেখা যাচ্ছে বিশেষভাবে কাপড় দিয়ে মুখ ঢেকে। করোনা ভাইরাস-এর বিপক্ষে টিকা প্রস্তুতের চেষ্টা চলেছে। মনেহয় তা শিগগিরিই প্রস্তুত করা সম্ভব হবে।
চীন করোনা ভাইরাস-এর সাহায্যে জীবাণু অস্ত্র বানিয়েছে, একথা বলেছেন তেলআবিবের একজন ইহুদি বিজ্ঞানী। যিনি জীবাণু অস্ত্র সম্পর্কে যথেষ্ট জ্ঞাত। তাই চীনের জীবাণু অস্ত্র নির্মাণ করাটাকে হালকা গুজব হিসেবে আর মনে করা যাচ্ছে না। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্রিটিশ সৈন্য ইনফ্লুয়েঞ্জা রোগে মারা গিয়েছিল। ধারণা করা হয়, এই ইনফ্লুয়েঞ্জা রোগ জীবাণু ছড়িয়ে ছিল জার্মানি। কিন্তু পরে এই রোগ জার্মান সৈন্যদের মধ্যেও হতে পেরেছিল যথেষ্ট সংক্রমিত। বলা হয়, জীবাণু অস্ত্রের সুবিধা হলো, এর প্রয়োগে সৈন্যসহ বহু মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়ে। অসুস্থদের সেবা যত্ন করতে যেয়ে আরো অনেক লোক আটকা পড়ে। লড়াইয়ের জন্য ও তা যথাযথভাবে চালিয়ে যাওয়ার জন্য দেখা দেয় লোকের অভাব। কিন্তু বাস্তবে রোগ জীবাণু কেবল শত্রুপক্ষের মধ্যেই নিবদ্ধ থাকেনা। সংক্রমিত হতে পারে তা নিজেদের মধ্যে মধ্যেও।
চীনের এক সন্তান নীতি চীনের ভয়ঙ্কর ক্ষতি করেছে। চীনে দারুনভাবে দেখা দিয়েছে বিবাহযোগ্যা নারীর অভাব। চীন চাচ্ছে অন্য দেশ থেকে নারী আমদানি করতে। এখন চীন জীবাণু অস্ত্র বানাতে যেয়ে নিজেই পড়ল করোনা জ্বরের মহামারীতে। চীনে চলছে একদলের সরকার। চলছে স্বৈরশাসন। কাজের সমালোচনা করতে পারছেনা সর্বসাধারণ। এর থেকে আমাদেরও শিক্ষা নেবার আছে। কোন সরকারের হাতেই সীমাহীন ক্ষমতা তুলে দেওয়া যায়না, দেশের কল্যাণ করবার জন্য। সেইসঙ্গে সর্বাত্মক রাষ্ট্রের ধারণাটাও হওয়া উচিত বর্জনীয়।
লেখক : শিক্ষাবিদ, অনুজীব বিজ্ঞানী ও কলামিস্ট