করোনা ভাইরাসের কারনে সম্পূর্ণরূপে ভেঙ্গে পড়তে পারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসন। এমনকি অকার্যকর হয়ে যেতে পারে কংগ্রেস এবং সুপ্রিম কোর্টসহ সমস্ত সাংবাধিক পদ ও ব্যবস্থা। খাদ্য সঙ্কটসহ বিভিন্ন কারনে দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়তে পারে সংঘাত। এমনিক দেশের দুর্বল এ পরিস্থিততে মার্কিন যুক্তরাষ্টের ওপর ঘটতে পারে ভয়াবহ সামরিক হামলা। এমন পরিস্থিতি এড়াতে দেশ রক্ষায় মার্শাল ল বা সামরিক শাসন জারির প্রস্তুতি নিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এ বিষয়ে স্ট্যান্ড বাই অর্ডার জারি পর্যন্ত করা হয়েছে। সামরিক শাসন জারি হলে দেশজুড়ে ক্ষমতা ন্যাস্ত হবে মিলিটারি কমান্ডারদের হাতে।
করোনা ভাইরাসের বিপর্যয় মোকাবেলায় কিভাবে হোয়াইট হাউজ ও রাজধানী ওয়াশিংটন পুরোপুরি খালি করে বিকল্প স্থান থেকে শাসন ব্যবস্থা চালিয়ে নেয়া হবে সে পরিকল্পনাও গ্রহণ করা হয়েছে। এমনকি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এ দুর্বল অবস্থায় যদি হোয়াইট হাউজের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে তাহলে কিভাবে হোয়াইট হাউজের ধ্বংস স্তুপ থেকে থেকে প্রেস্টিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স এবং তাদের পরিবারকে উদ্ধার করা হবে সে বিষয়েও পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। স্পর্শকাতর আর শীর্ষ গোপনীয় এ খবর প্রকাশ করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী সাময়িকী নিউজউইক। নিউজউইকের খবরে বলা হয়েছে করোনা ভাইরাসের কারনে সাংবিধানিক সমস্ত পদের কর্মকর্তারা যদি অক্ষম হয়ে পড়েন তাহলে আর্মি সে ক্ষেত্রে কি কি ভূমিকা পালন করতে পারে তার পরিকল্পনা নিয়ে রাখা হয়েছে। তিন সপ্তাহ আগে এ বিষয়ক করণীয় নির্ধারণ করার জন্য স্ট্যান্ড বাই অর্ডার জারি করা হয়েছে। এর উদ্দেশ্য শুধুমাত্র রাজধানী ওয়াশিংটনকে রক্ষা কর নয় বরং কোনা না কোন মাত্রায় সম্ভাব্য সামরিক আইন জারির প্রস্তুতি নেয়া । আর এটি হলে গোটা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রন কমান্ডারদের হাতে ন্যাস্ত হতে পারে। ফলে স্বাভাবিক সাংবিধানিক শাসন ব্যবস্থা ব্যহত হতে হবে। কিন্তু করোনা ভাইরাসের কারনে স্বয়ং আর্মিও বিপদে রয়েছে।
করোনা ভাইরাসের কারনে ওয়াশিংটন খালি করা হলে মার্র্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কমব্যাটান্ট কমান্ডার এয়ারফোর্স জেনারেল টেরেন্স জে ওশানেসির হাতে কাগজে কলমে ন্যস্ত হবে ওয়াশিংটনের দায়িত্বভার। নতুন বেসামরিক নেত্বত্ব দায়িত্বভার নেয়ার আগ পর্যন্ত তার হাতে থাকবে দায়িত্ব। জেনারেল টেরেন্স জে নর্থকম কলোরাডো স্প্রিং ঘাটির কমান্ডার।
নিউজ ইউকের প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে নতুন দলিল এবং সামরিক বিশেষজ্ঞদের সাথে কথা বলে এসব পরিকল্পনার বিভিন্ন কোড নেম সম্পর্কে জানা গেছে। এরকম তিনটি কোডনেম হলো অক্টাগন, ফ্রিজ্যাক এবং জোডাইক। এ কোড নেমের অধীনে যেসব পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে তার লক্ষ্য হলো সরকারের ধারাবাহিকতা রক্ষা করা। সরকারকে সহায়তা করা।
করোনা ভাইরাসের কারনে অন্য সবার মত মার্কিন আর্মিও বিপদের সম্মুখীন। সে কারনে পেন্টাগনের পক্ষ থেকে সেনাদের ঘাটির বাইরে চলাচল ও ৬০ দিনের জন্য বিদেশ গমনের ক্ষেত্রে কঠোর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। পেন্টাগন থেকে জারি করা অতিরিক্ত আরেকটি আদেশে বলা হয়েছে সমস্ত ইউনিফর্মযুক্ত সেনাদের যেন সামরিক ঘাটি বা তার কাছাকাছি রাখা হয়। তবে মিশন এসেনশিয়ালের জন্য যারা ভ্রমনে থাকবে তারা নয়। মিশন এসেনশিয়ালের মধ্যে রয়েছে স্বয়ং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যদি যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত হয় সে জন্য হোমল্যান্ড ডিফেন্স পরিকল্পনা। এর নাম কনপ্লান ৩৪০০। আমেরিকার ওপর বাইরের আক্রমন হলে বেসামরিক প্রশসানকে সহায়তা করা । এর নাম কনপ্লান ৩৫০০।
সরকারের ধারাবাহিকতা রক্ষায় জাতীয় রাজধানী এলাকা বা ন্যাশনাল ক্যাপিটাল রিজিয়নে সামরিক অভিযান পরিচালনা করা। এর লক্ষ্য সরকারের ধারাবাহিকতা রক্ষা করা । পরিকল্পনার এ অংশের নাম কনপ্লান ৩৬০০। মিশন এসেনশিয়ালের মধ্যে এক ডজনের অধিক গোপন পরিকল্পনা রয়েছে। এসব পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে মার্কিন নর্দার্ন কমান্ডের অধীনে। নর্দার্ন কমান্ড সংক্ষেপে নর্থকম নামে পরিচিত। ২০০১ সালে ১১ সেপ্টেম্বর টুইনটাওয়ার হামলার পর মার্কিন এ হোমল্যান্ড ডিফেন্স মিলিটারি অথরিটি তৈরি করা হয়। দেশজুড়ে করোনা ভাইরাস পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিরক্ষামন্ত্রী মার্ক টি এসপার গত ১ ফেব্রুয়ারি নর্থকমের প্রতি জারি করা আদেশে সাক্ষর করেছেন। নিউজউইকের খবরে বলা হয়েছে গোপনে সাক্ষর করা এ আদেশের নাম ওয়ানির্ং অর্ডার বা সংক্ষেপে ওয়র্নঅর্ড। করোনা ভাইরাসের কারনে সম্ভাব্য এক্সট্রা অর্ডিনারি মিশন বাস্তবায়নে সেনা মোতায়েনের বিষয়ে সর্তক থাকতে বলা হয়েছে নর্দার্ণ কমান্ডকে।
এক্সট্রা অর্ডিনারি মিশন বাস্তবায়নের জন্য সাতটি পরিকল্পনা রয়েছে। এর মধ্যে কিছু পরিকল্পনা রয়েছে খুবই উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সংশ্লিষ্ট। এর মধ্যে তিনটি রয়েছে ট্রান্সপোর্ট সংক্রান্ত। যেমন হোয়াইট হাইজ এবং ফেডারেল সরকার যদি খালি করে অন্যত্র নিয়ে যাওয়ার প্রয়োজন হয় এবং বিকল্প কোনো স্থান থেকে অফিস পরিচালনার প্রয়োজন হয় সে ক্ষেত্রে সহায়তা করা।
প্রথম পকিল্পনার নাম রেসকিউ এন্ড ইভাকুয়েশন অব দি অকুপ্যান্টস অব দি এক্সিকিউটিভ ম্যানসন। সংক্ষেপে রিসেম প্লান। এ পরিকল্পনার আওতায় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প, ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স এবং তাদের পরিবারকে সরিয়ে নেয়া বা উদ্ধার করার পরিকল্পনার কথা বলা হয়েছে। গোয়েন্দা সংস্থার নির্দেশে তাদের নির্দিষ্ট স্থানে সরিয়ে নেয়া হবে। অথবা যদি হোয়াইট হাইজ ধ্বংস হয়ে যায় সেত্রে তাদেরকে কিভাবে ধ্বংসস্তুপ থেকে উদ্ধার করা হবে তার পরিকল্পনার কথা বলা হয়েছে এ পরিকল্পনায়।
দ্বিতীয় পরিকল্পনার নাম জয়েন্ট ইমার্জেন্সি ইভাকুয়েশন প্লান বা জিপ। এ পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রতিরক্ষা মন্ত্রী এবং অন্যান্য জাতীয় নেতৃবৃন্দ যাতে ওয়াশিংটন ত্যাগ করতে পারেন সে ব্যবস্থা করা।
তৃতীয় পরিকল্পনার নাম এটলাস। এর আওতায় বেসামরিক নেতৃত্ব, কংগ্রেস নেতৃবৃন্দ, সুপ্রিম কোর্ট এবং অন্যন্য গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গকে সরিয়ে নেয়া এবং তাদের জরুরি অবস্থানে পৌছে দেয়া। তৃতীয় পরিকল্পনার আওতায় একটি গোপন বাঙ্কার চালু করা হবে এবং কর্ডন করে রাখা হবে। সরকারি কার্যক্রম মেরিল্যান্ডে স্থানান্তরে সহায়ক হবে এ বাঙ্কার। এসব অধিকাংশ পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে ট্রাম্পের প্রেসিডেনশিয়াল ইনঅগারালস এবং স্টেট অব দি ইউনিয়নে বক্তব্যের সময়।
কোডনেম অক্টাগনের অধীনে ওয়াশিংটন সামরিক শাখা, ফ্রিজ্যাকের অধীনে নর্থ ক্যারোলাইনা সামরিক ইউনিট এবং জোডাইকের অধীনে ম্যারিল্যান্ডের সামরিক ইউনিট রয়েছে। করোনা ভাইরাসের কারনে যদি প্রশাসন পুরোপুরি ভেঙ্গে পড়ে তাহলে এ তিনটি মিলিটারি ইউনিট প্রশাসন রক্ষায় এগিয়ে আসবে। সপ্তম পরিকল্পনার কোড নেম গ্রানাইট শ্যাডো। এর অধীনে থাকবে ইউপনস অব ম্যাস ডিসট্রাকশন।
জয়েন্ট চিফ অব স্টাফ নিউজ উইকের প্রতিবেদককে জানিয়েছেন করোনা ভাইরাসের প্রভাব দেশজুড়ে। আমরা এমন একটি অঞ্চলে রয়েছি যেখানে আমরা আগে কখনো ছিলাম না। ইতোমধ্যে এ আদেশের খবর প্রকাশ হয়ে পড়েছে। এছাড়া প্রতিরক্ষামন্ত্রী মার্ক এসপার এবং তার ডেপুটি ডেভিড নরকুইস্ট আলাদা আলাদভাবে অবস্থান করছেন। অন্যান্য জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থাগুলিও তা অনুসরণ করছে। নিউজউইকের এ খবরে বলা হয়েছে প্রশাসনের কমকর্তাসহ ব্যাপকসংখ্যক কংগ্রেস সদস্যরাও করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হবার আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ অবস্থায় ঘটতে পারে কোরাম সঙ্কট। আর প্রশাসন চলে যেতে পারে দ্বিতীয় সারির কর্মকর্তাদের কাছে।
করোনো ভাইরাসের কারনে সৃষ্ট এ পরিস্থিতিতে এক্সট্রাঅর্ডিনারি সারকমন্সট্যান্সেস আখ্যায়িত করেছেন বিশেষজ্ঞরা। করোনা ভাইরাস মোকাবেলার পরিকল্পনায় বলা হয়েছে যে কোনো পরিস্থিতিতে সরকার অপরিহার্য কার্যক্রম চালিয়ে যাবে । এমনকি যদি প্রয়োজন হয় দ্বিতীয় সারির প্রশাসন অথবা সাময়িক সামরিক কমান্ডের আদেশে হলেও। ফেডারেল কমিউনিটি ডাইরেকটিভ ১ অনুসারে ‘ন্যাশনাল এসেনশিয়াল ফাংশনস’ এর একটি হলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং বিশ্ববাসীর সামনে মার্কিন নেতৃত্বকে দৃশ্যমান রাখার ব্যবস্থা করা। আমেরিকান জনগণের বিশ্বাস এবং আস্থা ধরে রাখার জন্য এটি করা হবে। নিউজ উইকের বিশ্লেষনে বলা হয়েছে এ আয়োজন জনগনের মধ্যে আরো আতঙ্ক ছড়িয়ে দিতে পারে এবং তা ভাইরাসের মতই ভয়াবহ হতে পারে।