একজন খেলোয়াড়কে পরিমাপ করার প্রধান উপায় তার পারফরম্যান্স। এই যোগ্যতা দিয়ে কেউ বিশ্বসেরা হন, যোগ্যতার প্রমাণ দিতে না পারলে অনেকেই হারিয়ে যান। কিন্তু নারী ক্রীড়াবিদদের কথা যখন আসে, সাথে চলে আসে সৌন্দর্যের কথা। এটি খেলার মাঠে যোগ্যতার কোনো মাপকাঠি না হলেও নারী আর সৌন্দর্য শব্দ দুটি যেন অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। তাই তো মাঠের পারফরম্যান্সের পাশাপাশি যারা রূপের জাদুতেও মুগ্ধ করেন দর্শকদের, তাদের কথা একটু আলাদা করেই আলোচনা হয়।
সুন্দরী ক্রীড়াবিদদের অফিশিয়াল কোন তালিকা নেই। দর্শক-সমর্থকদের প্রতিক্রিয়া, সোস্যাল মিডিয়ার আলোচনা, ইন্টারনেট সার্চ ইঞ্জিনের রেটিং, মিডিয়া হাইপ- ইত্যাদি বিষয় বিবেচনায় রেখে বিভিন্ন ওয়েবসাইট সেরা সুন্দরী ক্রীড়াবিদদের তালিকা করে থাকে। এটি একান্তই তাদের নিজস্ব তালিকা। তবে বিভিন্ন ওয়েবসাইটের এসব তালিকায় ঘুরে ফিরে কয়েকটি নামই আসতে দেখা যায়। আর এ সংক্রান্ত সব তালিকায় যে নামটি উপরের থাকে সেটি হলো আনা ইভানোভিচ।
সার্বিয়ার সাবেক এই টেনিস তারকার জন্ম ১৯৮৭ সালে। রূপে-গুণে মুগ্ধ করা বলতে যা বোঝায়, ঠিক তেমনটিই ছিলেন ইভানোভিচ। ছয় ফুট উচ্চতা আর আকর্ষণীয় গড়নের এই তারকা ২০০৩ সালে পেশাদার টেনিস খেলোয়াড় হিসেবে আত্মপ্রকাশের পর জিতেছেন ১৫টি ডব্লিউ-টি-এ সিঙ্গেলস শিরোপা। ২০০৮ সালে জিতেছেন গ্রান্ডস্লাম টুর্নামেন্ট ফ্রেঞ্চ ওপেনের শিরোপা। সেবারই টেনিস র্যাঙ্কিংয়ে এক নম্বরে ওঠেন ইভানোভিচ। গ্রান্ড স্লাম টুর্নামেন্টের ফাইনাল খেলেছেন আরো দুবার। ২০১৬ সালে অবসর নেয়ার আগে শুধু প্রাইজ মানি হিসেবেই জিতেছেন ১৫.৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।২০১১ সালে বিখ্যাত টাইম ম্যাগাজিন তাকে স্থান দেয় মহিলাদের টেনিসের ৩০ জন কিংবদন্তীর তালিকায়।
বেলগ্রেড ইউনিভার্সিটি থেকে ফিন্যান্স বিষয়ে ডিগ্রি নেয়া ইভানোভিচ বিয়ে করেছেন জার্মানির বিশ্বকাপ জয়ী ফুটবলার বাস্তিয়ান শোয়েনস্টাইগারকে। খেলার পাশাপাশি মডেল হয়েছেন ভ্যানিটি ফেয়ার, স্পোর্টস ইলাস্ট্রেটরসহ অনেক বিখ্যাত ফ্যাশন ম্যাগাজিনে।
আনা ইভানোভিচের পারফরম্যান্সের মতো তার রূপেও মুগ্ধ ছিলেন ভক্ত সমর্থকরা। অনেক বড় বড় নামও ছিলো সেই তালিকায়। যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প একবার সার্বিয়া সফরে গিয়ে ইভানোভিচকে বিশ্বের সেরা সুন্দরী হিসেবে আখ্যায়িত করেছিলেন।
টেনিস কোর্টের সুন্দরীদের কথা উঠলে অবশ্য আরো দুটি নাম আসবে। তারা হলেন ক্যারোলিন ওজনিয়াকি ও মারিয়া শারাপোভা। দুজনেই নিজ নিজ সেরা সময়ে ছিলেন ওয়ার্ল্ড র্যাঙ্কিংয়ের এক নম্বরে। ডেনিশ তারকা ওজনিয়াকি ২০১৮ সালে জিতেছেন গ্রান্ডস্লাম টুর্নামেন্ট অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের শিরোপা। এছাড়া ৩০টি ডব্লিউটিএ একক শিরোপাও জিতেছেন। সব মিলে ৭১ সপ্তাহ ছিলেন র্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষে।
রুশ টেনিস সেনসেশন মারিয়া শারাপোভা অবশ্য মাঠের সাফল্যে ইভানোভিচ ও ওজনিয়াকির চেয়ে অনেক এগিয়ে। বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারে জিতেছেন ৫টি গ্রান্ডস্লাম টুর্নামেন্ট। দুইবার ফেঞ্চওপেনসহ টেনিসের চারটি গ্রান্ডস্লাম টুর্নামেন্টের সবগুলো শিরোপাই গেছে তার ঝুলিতে। ডব্লিউটিএ একক শিরোপা জিতেছেন ৩৬টি। বিভিন্ন সময়ে ৫ বার উঠেছেন র্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষে।
তারকা দ্যুতির মতো শোবিজ জগতেও আগের দুজনের চেয়ে শারাপোভার বিচরণ ছিলো অনেক বেশি। ক্যারিয়ারের সেরা সময়ে ৬ ফুট ২ ইঞ্জি উচ্চতার এই তারকাকে নিয়ে ফ্যাশন হাউজ ও ম্যাগাজিনগুলোর মাঝে রীতিমতো কাড়াকাড়ি পড়তো।
নাইকি, ক্যাননসহ বিশ্বের অনেক নামীদামী ব্রান্ডের মডেলিং করেছেন এই রুশ তারকা। ফোর্বস ম্যাগাজিনের জরিপে, টানা ১১ বছর বিশ্বের সবচেয়ে বেশি উপার্জনকারী নারী খেলোয়াড় ছিলেন শারাপোভা। ডোপ কেলেঙ্কারিতে ১৫ মাসের নিষেধাজ্ঞা অবশ্য তার বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারে কালির দাগ রেখে গেছে। ২০০১ সালে পেশাদার টেনিস জগতে প্রবেশ করা এই তারকা অবসর নিয়েছেন ২০২০ সালে।
যুক্তরাষ্ট্র মহিলা ফুটবল দলের স্ট্রাইকার অ্যালেক্স মরগান। ২০০৯ সাল থেকে খেলছেন জাতীয় দলে। যুক্তরাষ্ট্রের হয়ে ২০১২ সালে জিতেছেন অলিম্পিক স্বর্ণপদক। ২০১৫ ও ২০১৯ সালে টানা দুইবার দেশকে এনে দিয়েছেন মহিলা বিশ্বকাপ ফুটবলের শিরোপা।
আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে ১৭৩ ম্যাচে গোল সংখ্যা ১০৮টি। ২০১৯ বিশ্বকাপের এক ম্যাচেই ৫ গোল করার কৃতিত্ব রয়েছে তার। সেবার টুর্নামেন্টে সিলভার বুট জিতেছেন মরগান।
নাইকি, প্যানাসনিক, কোকা-কোলা, ম্যাগডোনাল্ডসসহ অনেক বিখ্যাত ব্রান্ডের মডেল হয়েছেন মরগান। নামীদামী ম্যাগাজিন ও ফ্যাশন হাউজগুলোর সাথেও কাজ করেছেন প্রচুর।মডেলিং ছাড়াও বেশ কিছু সিনেমা ও টিভি সিরিয়ালে অভিনয় করেছেন মরগান। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের স্পোর্টস ডিপ্লোম্যাসি দফতরের সাথেও কাজ করছেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সাথে সম্পর্ক উন্নয়নে। লেখক হিসেবেও সুনাম রয়েছে বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী এই ফুটবলারের।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রফেশনাল সার্ফারআলানা ব্লানচার্ডও আরেক তারকা যিনি ক্রীড়াজগতে হাজির হয়েছিল পারফরম্যান্স আর গ্ল্যামার এক সাথে নিয়ে। প্রশান্ত মহাসাগরের বুকে হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জর অন্তর্গত কাউই দ্বীপে জন্ম তার। সাগর পাড়ের মেয়ে, সাগরের ঢেউয়ের সাথেই বেড়ে ওঠা। সে কারণেই হয়তো সার্ফিং জগতে তার আগমন।
২০০৫ সালে ক্যারিয়ার শুরুর পর সে বছরই টিএন্ডসি ওমেনস পাইপলাইন চ্যাম্পিয়নশীপের শিরোপা জেতেন শর্টবোর্ড ক্যাটাগরিতে। পরপর আরো কয়েকটি শিরোপা জিতে দ্রুতই জায়গা করে নেন সার্ফিং গ্লোবের সেরা দশে।
সৌন্দর্যের কারণে দ্রুতই তাকে মডেলিংয়ের জন্য ডাকতে শুরু করে বিভিন্ন ফ্যাশন হাউজ ও নামীদামী কোম্পানি।যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ব্রান্ডের মডেলিং করেও শোবিজ জগতে সুনাম কুড়িয়েছেন আলানা ব্লানচার্ড।
ব্রিটনি পালমারকে দেখে প্রথম দর্শনে খেলোয়াড় নয় বরং মডেল বা অভিনেত্রী বলে ভুল করবে বেশিরভাগ মানুষ। অনেকে তাকে বলে মার্কিন মার্শাল আর্ট প্রমোশন কোম্পানি ইউফসির ইতিহাসের সেরা রিং গার্ল। মিক্সড মার্শাল আর্ট জগতের সবচেয়ে আবেদনময়ী পালমারের জন্ম ক্যালিফোর্নিয়ার সান ডিয়াগোতে।
পালমার অবশ্য খেলোয়াড়ের চেয়ে রিং গার্ল হিসেবেই বেশি খ্যাত। রিং গার্লরা মার্শাল আর্ট বা বক্সিংয়ের মতো খেলাগুলোর মাঝখানে এরপর কততম রাউন্ড শুরু হবে সেটি লেখা প্ল্যাকার্ড নিয়ে হাজির হয়। এছাড়া খেলার ফাঁকে খেলোয়াড়দের পানি পানসহ যে কোন প্রয়োজনে সহযোগিতা করে তারা।
রিং গার্ল হলেও পালমার মিক্সড মার্শাল আটের একজন দক্ষ খেলোয়াড়।মডেলিং আর অভিনয়েও তার খ্যাতি রয়েছে মার্কিন সুন্দরীর।এর পাশাপাশি ছবি আকা, সঙ্গীত, নৃত্যসহ অনেক কিছুতে দক্ষতা রয়েছে তার। রীতিমতো অলরাউন্ডার যাকে বলা হয়। ২০১২ সালে বিখ্যাত প্লেবয় ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদ তারকা হিসেবে পাঠকদের সামনে হাজির হয়েছিলেন পালমার।চিত্রশিল্পী হিসেবে তার সুনাম ছড়িয়ে পড়েছে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে। বিভিন্ন সেবামূলক কাজের সাথে জড়িত পালমার। নিজের ছবি বিক্রি করে বেশ কয়েকবার তহবিল সংগ্রহ করেছেন বিভিন্ন দাতব্য কাজের জন্য।
পেশাদার মার্কিন গলফার মিশেল ওয়ে সুন্দরী তালিকার আরেকটি নাম। হাওয়াই দ্বীপুঞ্জের হনুলুলুতে জন্ম নেয়া ওয়ের বাবা-মা দক্ষিণ কোরিয়া থেকে যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসী হয়েছিলেন। যে কারণে তার চেহারায় পূর্ব এশীয়দের ছাপ স্পষ্ট। মাত্র ১০ বছর বয়সে সবচেয়ে কম বয়সী অপেশাদার গলফার হিসেবে ইউএসজিএ চ্যাম্পিয়নশীপ খেলে রেকর্ড গড়েন তিনি।
সবচেয়ে কম বয়সী হিসেবে ইউএস ওমেন্স অ্যামেচার পাবলিক লিঙ্কস শিরোপা জিতেও রেকর্ড গড়েন মিশেল ওয়ে। সুযোগ পান এলপিজিএ ট্যুর ইভেন্টে, সেটিও কম বয়সী হিসেবে ছিলো বিশ্বরেকর্ড।
বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের লেডিস প্রফেশানাল গলফ অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য হিসেবে নিয়মিত খেলছেন এই তারকা। প্রফেশনাল গলফার হিসেবে২০১৪ সালের ওমেন্স ওপেনের শিরোপা জিতেছেন ইতোমধ্যেই। জিতেছেন আরো চারটি এলপিজিএ ট্যুরের শিরোপা।
গলফ কোর্টেরই আরেক সুন্দরী অস্ট্রেলিয়ার আনা রাউসন। ১৯৮১ সালে এডিলেডে জন্ম নেয়া আনা তার আকর্ষণীয় চেহারার কারণে মডেলিং জগতেও বেশ সুনাম কুড়িয়েছেন। ১৬ বছর বয়সের সময় একটি ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদ সুন্দরী প্রতিযোগীতার ফাইনালে উঠেছিলেন। অ্যামেচার গলফ দিয়ে ক্যারিয়ার শুরু হলেও একের পর এক সাফল্য পেয়ে দ্রুতই নাম লেখান পেশাদার জগতে। ২০০৪ সালে অবসর নেয়ার আগে অস্ট্রেলিয়া জাতীয় গলফ টিম ছাড়াও লেডিস ইউরোপীয়ান ট্যুর ও যুক্তরাষ্ট্রের এলপিজিএ ট্যুরে খেলেছেন অনেক দিন। অবশ্য গলফে বড় কোন শিরোপা ধরা দেয়নি তার হাতে। সে কারণেই হয়তো ক্যারিয়ার খুব বেশি দীর্ঘ না করে ঝুকেছেন শোবিজ জগতে।
মারিয়া শারাপোভার দেশ রাশিয়ার আরেক সুন্দরী ক্রীড়াতারকা অ্যানাস্তাসিয়া লুপোভা। ১৯৮৫ সালে কাজানে জন্ম নেয়া লুপোভা একজন শীর্ষস্থানীয় বিলিয়ার্ড তারকা। আবেদনময়ী নারী হিসেবে তার পরিচিতি আছে শোবিজ ও খেলার জগতে। রাশিয়ান বিলিয়ার্ডের দুইবারের ইরোপীয়ান চ্যাম্পিয়ন লুপোভা।আরো বেশ কিছু শিরোপা রয়েছে তার ঝুলিতে। ২০০৯ সালের মিস বিলিয়ার্ড প্রতিযোগীতায় সেরা নির্বাচিত হয়েছেন এই তারকা। সাফল্য ভরা ক্যারিয়ার শেষ করে ইতোমধ্যেই কাজ করতে শুরু করেছেন কোচ হিসেবে।
এর বাইরে আরো অনেক ক্রীড়া তারকাই রয়েছেন যাদের লাবন্যময়ী রূপ দর্শকদের মুগ্ধ করেছে। যাদের মধ্যে অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটার এলিসা পেরি, পাকিস্তানের কাইনাত ইমতিয়াজ, ভারতীয় টেনিস তারকা সানিয়া মির্জা অন্যতম।