বিশ্বজুড়ে রমজান

- সংগৃহীত

  • অনলাইন ডেস্ক
  • ১৭ এপ্রিল ২০২২, ১৭:৫৩

সারা বিশ্বের মুসলমানরা পালন করছে সিয়াম সাধনা। সুর্যোদয় থেকে সুর্যাস্ত পর্যন্ত মুসলমানরা পানাহার থেকে যে বিরত থাকার প্রভুর নির্দেশ পালন করে থাকেন। রোজা ভঙ্গের সন্ধ্যার সময় সৃষ্টি হয় এক পবিত্র অনুভুতি।


এই সময়ে মুসলমানদের মধ্যে যেমন ঐক্য ও সংহতির রুপ দেখা যায়, তেমনি পরস্পরের সাথে পবিত্র বন্ধনের সর্ম্পক তৈরি হয়। যার লক্ষ্য হচ্ছে পরিশুদ্ধির মাধ্যমে আল্লাহর নির্দেশ পালন। আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন।
সারা দিন পানাহার থেকে বিরত থাকার পরও রমজান মুসলমানদের কাছে আসে উৎসবের আমেজ নিয়ে। কেন এই উৎসবের অনুভুতি তৈরি হয়? কারন প্রতিটি মুসলমান মনে করে রোজা পালনের মধ্যদিয়ে পাপ ও খারাপ কাজ থেকে সে অনেক দূরে থাকতে পারছে। সেই চেষ্টা তারা করছে।
রমজানে ইফতার আনন্দের কারন। কারন এই মুহুর্তটি আসে আল্লাহর নির্দেশ পালনের নির্দিষ্ট সময় অতিক্রমের পর। ইফতার যেমন ইবাদতের একটি অংশ, তেমনি এটি হয়ে উঠছে সংস্কৃতির অংশ। আজ আমরা দেখবো বিশ্বের কয়েকটি দেশে ইফতার ও তারাবিহর কিছু দৃশ্য।


আমরা জানি বিশ্বের সবচেয়ে রক্তাক্ত জনপদ এখন ইউক্রেন। যেখানে যুদ্ধ চলছে। ইউক্রেনে বাস করেন অনেক মুসলমান। ইউক্রেনের বন্দর নগরী ওডেসা ও মারিউপুলে মুসলমানদের বসবাস বেশি। যুদ্ধের মধ্যে তাদের জীবনে এসেছে রমজান। এ সময় তারা একসাথে মসজিদে সমবেত হয়ে ইফতার করছে। কুরআন থেকে তেলওয়াত করছে। আবার পরিবার পরিজনের খবর রাখছে। নিজেদের মধ্যে ইফতার বিতরন করছে। অনেক পরিবার চলে আসেন মসজিদে। সেখানে তারা সম্মিলত ভাবে ইফতার করেন।


ভারতে রয়েছে বিপুল সংখ্যক মুসলমানের বাস। সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মপালনে নানা ভাবে তারা বাধার সমম্মুখীন হচ্ছেন। কিন্তু এরপরও ভারতীয় মুসলমানদের কাছে রমজান যেনো এক উৎসব। ভারতের রাজধানী দিল্লির জামা মসজিদ ভারতে মুসলিম শাসনের এক ঐতিহাসিক স্থান। এই মসজিদ প্রাঙ্গনে প্রতিদিন সমবেত হন শত শত মুসলমান সেখানে তারা এক সাথে ইফতার করেন। অনেকে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ইফতারে সমবেত হন। নামাজ আদায় করেন এই মসজিদে।


ফিলিস্তিনি মুসলমানদের রমজানের সাথে জড়িয়ে আল আকসার প্রতি ভালোবাসা। রমজান আসলে তাদের হৃদয়ে আল আকসার প্রতি ভালোবাসা যেনো তাদের অনুভুতিকে নাড়া দেয়। রমজানের আগে ফিলিস্তিনি নারীরা আসেন আল আকসা মসজিদ ধোয় মোছার কাজে।
রমজানের চাদ দেখার পর ফিলিস্তিনি শিশুরা তাদের ঐতিহ্যবাহি পোষাক পরে রমজানকে স্বাগত জানিয়ে মিছিল বের করে। মিছিলে শিশুদের সাথে পরিবারের সদস্যরা অংশগ্রহ করে। তারা পুরো জেরুসালেমের শহর ঘুরে আল আকসা চত্বরে সমবেত হয়। রমজানকে স্বাগত জানিয়ে জেরুসালেমের মুসলমানদের এমন বর্নাঢ্য উৎসব তেমনটা চোখে পড়ে না।
এরপর আসে রমজানের দিন। শত শত ফিলিস্তিনি অপেক্ষা করেন সেখানে তারাবিহর সালাত আদায় করবেন। প্রতি বছরের মতো এবারও এর ব্যতিক্রম হয়নি। অনেকে ইফতার সারেন আল আকসা চত্বরে । সাথে করে নিয়ে আসেন সন্তানদের।


ইন্দোনেশিয়ার মুসলমানদের কাছে রমজান যেনো এক ব্যতিক্রমী মাস। এ মাসে মসজিদের সাথে ইন্দোনেশিয়ার মানুষের সর্ম্পক যেনো বেড়ে যায়। ইন্দোনেশিয়ার দেখা যাবে তারাবিহর নামাজে সমবেত হয়েছে নারী ও শিশুরা। মায়ের সাথে রাতে মসজিদে আসেন শিশুরা। সেখানে তারা তারাবিহর সালাত আদায় করেন। মসজিদগুলোতে থাকে নারী ও পুরুষের এক সাথে নামাজ আদায়ের ব্যবস্থা। বিকেল থেকে শিশুদের কুরআন পড়তেও দেখা যায়।


তুরস্কে রমজান আসে অনেকটা উৎসব আর ভাবগম্ভীর পরিবেশে। ব্লুমস্ক চত্বরে বসে হাজারো মানুষের এক সাথে ইফতারের আয়োজন। এখানে দেখা মিলবে নানা দেশের মানুষকে। এবার অবশ্য তুরস্কের মুসলমানরা একটু ভিন্ন অনুভুতিতে তারাবাহি আদায় করেছে। দীর্ঘ ৮৮ বছর এবার হাজিয়া সোফিয়ায় হয়েছে তারাবিহর নামাজ। শত শত মানুষ এই মসজিদে নামাজ আদায় করছেন। ঐতিহাসিক এই মসজিদটি তুরস্কের মানুষের আবেগের সাথে জড়িয়ে আছে।


যুক্তরাষ্ট্রে এখন বহু মুসলমানের বসবাস। প্রতিটি বড় শহরে গড়ে উঠেছে মুসলিম কমিউনিটি। ব্যস্ততার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের মুসলমানরা বড় শহরগুলোতে চেষ্টা করেন এক সাথে ইফতার ও তারাবিহর নামাজ আদায় করতে। ওয়াশিংটন, নিউইয়র্কসহ যুক্তরাষ্ট্রের সব মসজিদে থাকে ইফতারের ব্যবস্থা সেখানে সাধারনত মুসলিমরা সমবেত হয়ে ইফতার সারেন।


সারা বিশ্বের মুসলমানদের মতো পাকিস্তানের মুসলমানরা সাধারন ভাবে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে এক সাথে ইফতার করেন। আবার মসজিদ কিংবা রাস্তার পাশে বিছানা পেতে ইফতারের দৃশ্য চোখে পরে। রাজধানী শহর ইসলামাবাদ হোক কিংবা পেশোয়ার সব জায়গায় চোখে পড়বে একই দৃশ্য। তবে পাকিস্তানের মসজদ গুলোতে ইফতারের বিশেষ আয়োজন করা হয়।


চীনের মুসলমনার রমজানের আগে হালাল খাবারের দোকানগুলোতে ভিড় করে। রাজধানী বেইজিংয়ে আছে বেশ কিছু হালাল রেষ্টুরেন্ট সেখানে ইফতার করতে দেখা যায় অনেক মুসলমানকে। বেইজিংয়ে রয়েছে ৯৯৬ সালে নির্মান করা নিউজি মসজিদ। অনেক মুসলমান এই মসজিদে এসে ইফতার ও নামাজ আদায় করেন।


যেসব দেশে মুসলমাদের সংখ্যা একেবারেই কম সেখানেও রমজানে মুসলমানরা একত্রিত হয়ে ইফতার ও তারাবিহর নামাজ আদায় করেন। দক্ষিন আমিরকার দেশ পেরুতে মুসলমানের সংখ্যা মাত্র ১৫ হাজারের মতো। যাদের বেশিরভাগ বসবাস করেন রাজধানী শহর লিমায়। সেখানেও মুসলমানদের মসজিদ আছে সেখানে তারা ইফতারের জন্য সমবেত হন। নামাজ আদায় করেন।

একই ভাবে মধ্য আমেরিকার দেশ গুয়েতেমালাতে আছে দেড় হাজারের মতো মুসলিম। যাদের বেশির ভাগ ফিলিস্তিন থেকে এসেছেন। তাদের সংখ্যা কম হলেও আতিœক যোগাযোগ যেনো নিবিড়। রমজানে তারা মসজিদে সমবেত হন। নামাজ আদায় করেন।