রাশিয়ান ভাষায় একটি কথা আছে বর্তমান সময়ের ঘটনাগুলো পর্যবেক্ষণের সময় ‘গাছ দেখেই তাকে বন ভেবো না’। তাতে যা ঘটে চলেছে তার প্রধান বিষয়বস্তুই হারিয়ে যায়। তুরস্ত ও রাশিয়ার বহু নাগরিক, যখন রাজনৈতিক ও বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করতেন সেসব শুনে আমার মনে হয়েছে: রাজনীতির খেলায় বিভিন্ন পক্ষের মধ্যকার আস্থা ও দীর্ঘ মেয়াদী বাস্তবতা নিয়ে তারা বেশ চিন্তিত।
দেশগুলোর মধ্যকার প্রকৃত সম্পর্ক কেবল আলাপ আলোচনা বা নেতাদের পারস্পারিক বিবৃতির ওপর নির্ভর করে না। কখনো কখনো বেশ বড় পরিসরে বা তাদের মধ্যকার সুযোগ-সুবিধার ভাগাভাগি দেখেও বোঝা যায়। কিন্তু কাগজে-কলমে যেসব চুক্তি বা সমঝোতা হয় তাও সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ।
এক্ষেত্রে রাশিয়া ও তুরস্কের মধ্যকার সাম্প্রতিক সম্পর্ককে কখনোই নেতিবাচক বলা যাবে না। আবার সে সম্পর্ক ‘শূণ্য ভারসাম্য রেখা’র ওপর দাঁড়িয়ে আছে সেটাও বলা যাবে না। বরং বলা যায়, আমরা সব সময় ইতিবাচক ফলাফলই প্রত্যাশা করে আসছি।
রুশ-তুর্কি নতুন সম্পর্কের সর্বোচ্চ অবস্থা দেখা গেছে ২০১৪ সালে যখন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন তুরস্কের রাজধানী আঙ্কারা সফরে যান। সে সময়ের এই সফরকে গণমাধ্যমগুলো তুলে ধরে ‘ঐতিহাসিক’ হিসেবে। যা হোক, ওই সফর ছিল তিন দশকের মধ্যে প্রথম কোন রুশ রাষ্ট্রনায়কের তুরস্ক সফর। আর তার মাধ্যমেই দুই দেশ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ঐতিহাসিক মাত্রায় পৌঁছায়। শুধু কথায় নয়, প্রতিশ্রুতিতে নয় বরং নানা কার্যক্রম ও উভয় পাক্ষিক স্বার্থ সংরক্ষণের মধ্য দিয়ে পারস্পারিক সম্পর্কের নতুন দিগন্ত সূচনা করে দুই দেশ।
আর প্রতিটি সময়ই আমি বলে এসেছি, আমরা আঞ্চলিক নানা জটিল ও কঠিন সমস্যার সমাধানের পরবর্তী ধাপের আলোচনায় বসতে যাচ্ছি। পারস্পরিক সহযোগিতা ও সম্পর্কের কয়েকটি উদাহরণ এখানে তুলে ধরা যাক।
ক্ষমতার মহাসড়কে
বহু দশক ধরে তুরস্ক চাচ্ছিল বিশ্বের শক্তিধর দেশগুলোর ক্লাবে নিজের নাম লেখাতে। তুরস্কে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মানের জন্য ইতিপূর্বে অনেকবার নিলাম ডাকা হয়েছে। সে সময় অনেক নিলামের ডাক মার্কিন ও ইউরোপীয় কোম্পানিগুলোকে অনেক ছাড় দিয়ে দেয়া হয়। কিন্তু তাদের কোন কোম্পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে এগিয়ে আসেনি। বরং তুরস্ক বারবার বৈজ্ঞানিক ও প্রকৌশলগত প্রতিযোগিতার মধ্যে পড়েছে।
ফলে তুরস্ক সরকার পুরোপুরি একটি মানদণ্ডহীন এক ভিন্ন পদক্ষেপ নেয়: এমন পদক্ষেপ পৃথিবীর কোন পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের জন্য নেয়া হয়নি। নিজস্ব প্রযুক্তির উপর ভিত্তি করে নিজস্ব লোকবল দিয়ে নিজেদের উদ্ভাবিত পন্থায় তার বাস্তবায়ন শুরু করে। কিন্তু এই মডেল, আরো নির্দিষ্ট করে বললে, আক্কুয়ু পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য এই মডেলেই কাজ শুরু হয়। পরবর্তীতে ২০০৮ এর বৈশ্বিক মন্দার সময় তুরস্কের প্রস্তাবে রাজি হয় একমাত্র দেশ রাশিয়া। নিজেদের পারমাণবিক প্রযুক্তি ও অর্থ বিনিয়োগ করে গড়ে তোলা হয় তুরস্কের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র।
একই সঙ্গে উভয় পক্ষ টার্কস্ট্রিম প্রকল্পের ব্যাপারেও সম্মত হয়। তাদের এই একমত হওয়ার পেছনে লক্ষ্য ছিল সুদূর ভবিষ্যৎ। এতে করে রাশিয়ার গ্যাস কেবল তুরস্কে পৌঁছেনি বরং তুরস্কের ভূমি ব্যবহার করে তা পৌঁছে গেছে ইউরোপে। কমপক্ষে ১০ বছরেরও বেশি সময় ধরে আমি লিখে চলেছি ও বলে যাচ্ছি, দুদিন আগে হোক কিংবা পরে, রাশিয়া এমন কিছু পদক্ষেপ নেবেই। সে সময় এমন পদক্ষেপ নেয়াই উচিত হয়েছে এবং সেরা পদক্ষেপ ছিল। যদিও কিছু রাশিয়ান পর্যালোচক একে উল্লেখ করেছেন ‘মন্দের ভাল’ হিসেবে। কিন্তু আজ আমরা দেখতে পাচ্ছি, ইউক্রেনসহ কেবল রাশিয়ার নিকট প্রতিবেশিরাই নয় বরং জ্বালানী নীতির বিষয়ে রাশিয়া যাদের ওপর অতি মাত্রায় নির্ভরশীল ছিল তারাই হুমকি হয়ে উঠেছে। কিন্তু এক্ষেত্রে রাশিয়ার একমাত্র বন্ধু রাষ্ট্র হিসেবে পাশে থেকেছে তুরস্ক।
এস-৪০০ ফ্যাক্টর
রাশিয়ার উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন ক্ষেপনাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এস-৪০০ সরবরাহের তীব্র বিরোধিতা করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এবং বহু বছর ধরে তুরস্ক যখন মার্কিন প্যাট্রিয়ট প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কেনার আগ্রহ দেখিয়েছে তখন তারা প্রত্যাখ্যান করেছে। এটা হয়ে ওঠেনি কেননা, রাশিয়ার প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ন্যাটোর সব প্রতিরক্ষার গোপন তথ্য জোগাড় করে রেখেছিল। এটা খুবই পরিস্কার যে, সামরিক প্রযুক্তিতে তুরস্কের ওপর বহু বছর ধরে যে মার্কিন আধিপত্য চলছিল রুশ-তুর্কি চুক্তির ফলে তা দুর্বল হয়ে পড়ে। এক পাক্ষিক মার্কিন আধিপত্য ও তুরস্কের উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণ করাকে কখনোই সহযোগিতা বলা যাবে না। এখনো ক্যাপিটল হিল সেটাই ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করে যাচ্ছে যে তুরস্ককে কি জানা উচিত, তাদের কি করা উচিত আর কি তৈরি করা উচিত নয়।
বর্তমান প্রেক্ষাপটে তুরস্ক বুঝতে পেরেছে যে, রাশিয়া থেকে এস-৪০০ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা নেয়ার পদক্ষেপ নেয়া তার সার্বভৌম অধিকার। তুরস্কের উদ্যেশ্য হচ্ছে এর প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে সার্বিকভাবে ‘জাতীয়করণ’ করা। আর এর পেছনে হয়তো অনেক বিষয় আলোচনায় আসতে পারে, তবে এসব কিছুর মধ্যে মূল বিষয় হবে তুরস্ক ও রাশিয়ার মধ্যকার আলোচনা।
ক্রেমলিনের লাভ
যে কোন ধরনের ভুল বোঝাবুঝির অবসানের জন্য রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্কের ফলে তুরস্কের যেমন কিছু লাভ আছে, একই রকমভাবে রাশিয়ারও কিছু স্বার্থ জড়িত। আর এটাকেই বলে ‘উইন-উইন সিচুয়েশন’। সব সময়ই মানুষ মতামতের ক্ষেত্রে দুইভাগে ভাগ হয়ে যায়। কেউ কেউ বলে তুরস্কের সঙ্গে রাশিয়ার সহযোগিতা হবে কেবল প্রতিপক্ষের জন্যই লাভজনক এবং অনিবার্য। আবার কারো কারো অভিমত ‘পারস্পারিক স্বার্থ’ সংরক্ষিত হলেই তা কেবল লাভজনক হতে পারে।
আমাদের বুঝতে হবে, স্পর্শকাতর কিছু বিষয়সহ নানা ইস্যুতে মতপার্থক্য থাকলেও দুই দেশ রাশিয়া ও তুরস্ক এবং এই দুই দেশের নেতা প্রেসিডেন্ট পুতিন ও প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান আলোচনা ও সহযোগিতার যে মনোভাব দেখাচ্ছেন এমন নজির স্থাপনকারী দেশের সংখ্যা এ বিশ্বে খুবই কম।
সিরিয়ার বিষয়ে, রুশ-তুর্কি আলোচনা এমন একটি পর্যায়ে গেছে যে অন্য শক্তি ইরানের সঙ্গে সমন্বয় করে আস্তানা প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এমন একটি সিদ্ধান্তে পৌছানো গেছে যা কোল্ড ওয়ার বা শীতল যুদ্ধ পরবর্তী আধুনিক ইতিহাসে অতি গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
প্রথমত, আস্তানা প্রক্রিয়া সিরিয়াকে লিবিয়ার মতো পরিস্থিতিতে পড়া থেকে রক্ষা করেছে। কিন্তু একই সঙ্গে ‘কমেন্স টেরিটোরি’তে পরিণত করেছে।
এটাকে দেখে এখন মনে হচ্ছে যে এমনটাতো হওয়ারই কথা ছিল। বিশেষ করে লিবিয়ার বিষয়ে নীরব থাকায় ২০১৫ সালে, সিরীয় গৃহযুদ্ধের চতুর্থ বছরে, জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে রাশিয়াকে দায়ী করা হয়। আর এটাই দামেস্কের আমন্ত্রণে সিরিয়ার ব্যাপারে রাশিয়ার হস্তক্ষেপের অন্যতম কারণ।
দ্বিতীয়ত এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো আস্তানা প্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অনেক দূরের কয়েকটি শক্তি স্থানীয় মানুষদের নিয়ন্ত্রণ করতে চেয়েছে। এখন রাশিয়া, তুরস্ক ও ইরান তাদের সেই ইচ্ছার কথা পুরো বিশ্বের সামনে উপস্থাপনও করেছে।
এ বিষয়ে তাদের মধ্যে যে প্রশ্নের জন্ম হয়েছিল সেটার অবসান হয়েছে ঠিক। তবে কখনো কখনো তা বেদনারও উদ্রেক করেছে। সেটা কেন জানেন? কারণটা খুব সাধারণ। কারণ এই তিনটি পক্ষ যতটা সম্ভব সবার ভাবনা ও স্বার্থ রক্ষার উপায় খুঁজছিল। আর সেই সঙ্গে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে একটি ‘কমন গ্রাউন্ড’ বের করার চেষ্টা করছিল। আসলে এক পক্ষের স্বার্থ যখন পুরো বিশ্বকে নিয়ন্ত্রণ করে তখন কোন সমস্যা থাকে না। সে সময় কেবল একটি টুইটার একাউন্টের মাধ্যমে এককভাবে নেয়া সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিলেই হয়। আমরা তখন হই প্রত্যক্ষদর্শী। আর এটাকে প্রাকৃতিক ফল হিসেবেই বিবেচনা করি। যদিও দুঃখজনকভাবে গেল সিকি শতাব্দীতে বিশ্বের নানা প্রান্তে ঘটে যাওয়া জন বিরক্তিকর ও ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড ঘটেই চলছে।
সোচি’র ত্রয়ী
বিশ্ব ভালবাসা দিবসে রাশিয়ার সোচিতে প্রেসিডেন্ট পুতিন, এরদোয়ান ও হাসান রুহানির অসাধারণ বৈঠককে আমি দেখি একটু অন্যভাবে।
প্রথম কথা, সিরিয়া থেকে সেনা প্রত্যাহারের বিষয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যে বিবৃতি দিয়েছেন এবং মার্কিনীরা যে পরষ্পরবিরোধী বা বহুমুখী কার্যক্রম পরিচালনা করেছে তা সিরিয়ায় আরো অধিক বিশৃঙ্খলার জন্ম দিয়েছে এবং ভবিষ্যতকে আরো বেশি অনিশ্চয়তায় ফেলেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সিরিয়ায় যে অবস্থান নিয়েছে যাকে এক কথায় বলা যায় ‘আমি থাকার জন্যই চলে যাচ্ছি’, এমন অবস্থান সিরিয়ার শান্তি প্রক্রিয়ার সত্যিকারের অংশগ্রহণকারী বিশেষ করে আস্তানা প্রক্রিয়ায় অংশ নেয়া দেশগুলোর কাজকে যেমন বাধাগ্রস্ত করছে তেমনি এক ধরনের তিক্ততা সৃষ্টি করেছে।
একই সঙ্গে লক্ষ্য করেছি সিরিয়ার শান্তি কার্যক্রমের ক্ষেত্রে পশ্চিমাদের বাজে ভূমিকা ছিল। সেই সঙ্গে আবার একটি সাংবিধানিক কমিশন গঠনের ব্যাপারে দামেস্ক এর সঙ্গে কঠোর পরিশ্রম করতে দেখা যাচ্ছে রাশিয়া, তুরস্ক ও ইরানকে। তবে সোচিতে আস্তানা প্রক্রিয়ার নেতারা সংবাদ সম্মেলন করে যে বক্তব্য দিয়েছেন তাতে এবং এই নানা পাক্ষিক ভূমিকার মাধ্যমে কেবল বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। আর যারা দীর্ঘদিন ধরে সিরিয়ায় শান্তি প্রতিষ্ঠার অপেক্ষায় আছে সেসব মানুষও বিভ্রান্ত হয়েছে।
অবশ্যই আস্তানা প্রক্রিয়ায় অংশ নেয়া দেশগুলোর মধ্যকার আলোচনা খুব সহজ ব্যাপার নয়। যাইহোক, সিরিয়ার সার্বভৌমত্ব বজায় রেখে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা আনার জন্য সেখানকার সব ধরনের বিষয় বিবেচনায় নিয়ে দেশটির সঙ্গে আলচনায় আস্তানা প্রক্রিয়ার সদস্যদেশগুলোর ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। এখানে মূল ব্যাপার হল রাশিয়া, তুরস্ক ও ইরান তাদের প্রতিশ্রুতি পালনের ব্যাপারে কতটা আন্তরিক হবে। শুধু কথার ফুলঝুরিতে নয় বরং কাজে তা প্রমাণ করতে হবে।
একই সঙ্গে রাশিয়াও বলছে তারা তুরস্কের আপত্তিগুলোকে প্রাধান্য দিয়েই ভূমিকা পালন করছে।
সোচির বৈঠকের পর দেখা যাচ্ছে রাশিয়া-তুরস্ক ইদলিব চুক্তির কার্যক্রম সম্পর্কে তুরস্কের ওপর কোন প্রকার চাপ দিচ্ছে না রাশিয়া। তুরস্ক এই চুক্তির সময় সীমার মধ্যে যেসব শর্ত বাস্তবায়ন করার কথা ছিল সে ব্যাপারেও রাশিয়া কোন চাপ দিচ্ছে না। সবশেষে বলা যায়, দুই দেশের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ‘সার্গেই সইগু’ ও ‘হুলুসি আকর’ তাদের নিয়মিত বৈঠক করে চলেছেন আর কঠোর পরিশ্রমও করে যাচ্ছে। সেই সঙ্গে লক্ষ্য করলাম, সিরিয়ার যুদ্ধবিহীন অঞ্চলে সর্বশেষ সামরিক অভিযানের ব্যাপারেও কোন আলোচনা হয়নি।
একই সঙ্গে আমাদের ভুললে চলবে না যে, তুরস্ক-সিরিয়ার সীমান্তবর্তী এলাকায় দায়েশ, পিকেকে’র সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত ডেমোক্র্যাটিক ইউনিয়ন পার্টি (পিওয়াইডি) এবং পিপলস প্রটেকশন ইউনিট (ওয়াইপিজি)কে হটিয়ে সিরিয়ায় একটি নিরাপদ অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করার ব্যাপারে তুরস্কের সঙ্গে ১৯৯৮ সালেই চুক্তি সাক্ষরকারী একমাত্র দেশ রাশিয়া। তাই পরবর্তী পর্যায়ে রাশিয়া যে তুরস্কের কার্যক্রমে সমর্থন দেবে তাতো একরকম জানা কথাই। আর সিরিয়া থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের ঘোষণার পর এ ধারণা আরো পরিস্কার হলো। কেউ কেউ সন্দেহ প্রকাশ করে বলেছেন, তারা কতদিন সিরিয়ায় থাকবে তা এখনো পরিস্কার নয়। এবং তুরস্ক ঠিকই বলেছে যে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের পর এখানে ক্ষমতার শূন্যতা থাকা চলবে না;অন্যথায় সন্ত্রাসীরা আবারো মাথা চাড়া দিয়ে উঠতে পারে। আর এসব বিষয় তুরস্ক ও রাশিয়ার অবস্থান যে একই তাতো বোঝাই যায়।
এমন অবস্থায় আন্তর্জাতিক প্রতিরোধ মোকাবেলায় সিরিয়া থেকে সরে আসার চেষ্টা চালাচ্ছেন ট্রাম্প। সেক্ষেত্রে আস্তানা প্রক্রিয়ার প্রধান কাজ হবে সমস্ত বাধা দূর করে একটি রাজনৈতিক স্থিতাবস্থা প্রতিষ্ঠায় সাংবিধানিক কমিশন গঠন করা। আমি আশা করবো তুরস্কে অনুষ্ঠিতব্য আস্তানা প্রক্রিয়ার পরবর্তী বৈঠকে সব পক্ষ থেকে আরো সুস্পষ্ট ঘোষণা আসবে এবং সেসব ঘোষণার বাস্তবায়নও খুব দ্রুতই হবে। সোচিতেও প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের সংবাদ সম্মেলনে একই রকম আশার কথা আমরা শুনেছিলাম। সেখানে তিনি বলেছিলেন, “সিরিয়ায় শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রত্যাশা এই প্রথমবারের মতো এমন জোরালো হয়েছে”।
সিরিয়ার মাঠের বাস্তবতায় ফলাফল অর্জন করা হবে আরেকটি কঠিন ব্যাপার। আমি শুরুতেই যেমন বলেছি, রুশ-তুর্কি সম্পর্ক কেবল তাদের মধ্যাকার সম্পর্কের খাতিরে নয়। অনিবার্য বাস্তবতা এবং উভয়ের স্বার্থই তাদেরকে চূড়ান্ত ফলাফলের দিকে নিয়ে যাবে। যাইহোক, চলুন আরেকবার স্মরণ করি যে, এটা কোন দৈব পুরস্কার নয় বরং উভয় দেশের বহু ত্যাগ ও কষ্টার্জিত এক অনন্য উপহার।
লেখক: তুর্কি সাংবাদিক।
ডেইলি সাবাহ থেকে ভাষান্তর করেছেন সাজিদ রাজু