বাংলা ভাষার প্রাচীন নিদর্শন চর্যাপদের কবি লিখেছিলেন, আপনা মাংসে হরিণা বৈরী অর্থাৎ হরিণ তার মাংসের কারণেই সকলের শিকারের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়। হাজার বছর পরেও কোনো-না-কোনো ফর্মে কথাটা নিদারুণ বাস্তব। আজকাল পৃথিবীর অস্ত্র প্রতিযোগিতা এবং তার পেছনের কারণ খুঁজে দেখলে বিষয়টি বুঝতে কষ্ট হয় না।
একইভাবে সাম্প্রতিক একের পর এক জ্বালানিভাণ্ডার আবিস্কার লেভান্ত অর্থাৎ ভূমধ্যসাগরীয় এলাকার পূর্বাঞ্চলের ভূ-রাজনীতিতে এনেছে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন। এ অঞ্চলের দেশগুলো - তুরস্ক, গ্রীস, মিশর, লেবানন ও দক্ষিণ সাইপ্রাস এখন ব্যস্ত কিভাবে নবলব্ধ এ জ্বালানির সরবরাহ নিরাপদ করা যায় এবং কিভাবে একে নিজ নিজ অর্থনীতির উন্নয়নে কাজে লাগানো যায়, তা নিয়ে।
খালি চোখে এ ব্যস্ততার মধ্যে দোষের কিছু দেখা যায় না। কিন্তু এই নিরাপত্তা ও সরবরাহের কাজটি করতে গিয়ে ওই দেশগুলোর নৌবাহিনীগুলোর আঞ্চলিক প্রতিযোগিতার ধিকি ধিকি আগুন দাউ দাউ করে করে জ্বলে ওঠার দিকে এগিয়ে চলেছে। এমনিতেই তুরস্ক, গ্রীস, মিশর ও ইসরাইলকে ওই অঞ্চলের শক্তিশালী নৌ-শক্তি বলে মনে করা হয়, আর এখন নানা রকম অস্ত্র ও সমর সরঞ্জাম সংগ্রহের মধ্য দিয়ে পায়ে-পায়ে এগিয়ে আসছে লেবানন ও দক্ষিণ সাইপ্রাস। সব মিলিয়ে বুঝতে কষ্ট হয় না যে আপাতনিস্তরঙ্গ জলের তলায় নীরবে শক্তি সঞ্চয় করছে একটি নিম্নচাপ। দূর ভবিষ্যতে তা যদি যুদ্ধেরও রূপ নেয়, অবাক হবার কিছু থাকবে না। এ আলোচনায় আমরা পরে আসছি। তার আগে খানিকটা পেছন ফেরা যাক।
ইতিহাসপাঠকমাত্রই জানেন, লেভান্ত অর্থাৎ ভূমধ্যসাগরীয় এলাকার পূর্বাঞ্চলটি বরাবরই ছিল আঞ্চলিক যুদ্ধ, সংঘাত ও প্রতিযোগিতার একটা জ্বলন্ত কুণ্ড। এসব যুদ্ধ সংঘাত ও প্রতিযোগিতা হতো সীমানা নিয়ে, প্রাকৃতিক সম্পদ নিয়ে এবং কার কত বেশি ঐতিহাসিক ও ধর্মীয় গুরুত্ব সেই জাত্যাভিমান নিয়ে। বলা ভালো, এ অঞ্চলকে ভূ-কৌশলগতভাবে এতটা গুরুত্বপূর্ণ করে তোলার পেছনে একটি বড় নিয়ামক হিসেবে কজ করেছে সুয়েজ খাল চালু হওয়া। এই খালটি এশিয়া, ইউরোপ ও আফ্রিকার বাজারগুলোর মধ্যে যোগাযোগ অনেক সহজ করে দিয়েছে, কমিয়ে দিয়েছে সময়, বাঁচিয়ে দিয়েছে অর্থ। আগে চলাচল করতে হতো উত্তমাশা অন্তরীপ হয়ে। তাতে সময় ও অর্থ দুটোই লাগতো অনেক বেশি। আর এখন সুয়েজ খাল দিয়ে প্রতিবছর ২২ হাজারেরও বেশি জাহাজ চলাচল করে। এটা সারা বিশ্বের মোট সমুদ্রবাণিজ্যের প্রায় তিন ভাগের এক ভাগ।
লেভান্ত অঞ্চলের গুরুত্বে নতুন মাত্রা যোগ করেছে ২০০০ সালের গোড়ার দিকে নতুন হাইড্রোকার্বন মজুত আবিস্কার। ইউএস জিওলজিক্যাল সার্ভে-র গবেষণামতে, সিরিয়ার উপকুলসহ লেভান্ত অঞ্চলে মজুদ জ্বালানি তেলের পরিমাণ এক দশমিক সাত বিলিয়ন ব্যারেল এবং প্রাকৃতিক গ্যাস মজুদের পরিমাণ তিন দশমিক পাঁচ ট্রিলিয়ন কিউবিক মিটার।
এই বিপুল প্রাকৃতিক সম্পদ নিয়ে উপকূলবর্তী দেশগুলোর মধ্যে নতুন করে শুরু হয়েছে বিতর্ক ও প্রতিযোগিতা। সবাই চায় এসব সম্পদ আহরণ এবং স্থানীয় ও বিশ্ববাজারে তা বিক্রি করতে। এর ফল হয়েছে এই, ওই অঞ্চলটি হয়ে গেছে একটি হট স্পট'। উত্তেজনা বাড়ছে ইকনমিক এক্সক্লুশন জোন (ইইজেড) এবং রিসার্চ পারসেলের সংজ্ঞা নিয়ে। দক্ষিণ সাইপ্রাস এককভাবে পুরো অঞ্চলটিকে ১৩টি তথাকথিত রিসার্চ পারসেলে বিভক্ত করার ঘোষণা দিয়েছে।
এই লেখার ভিডিওরুপ ইউটিউবে দেখতে ক্লিক করুন
ওই অঞ্চলে এই নতুন জ্বালানিকেন্দ্রিক ভূ-রাজনীতি ছাড়াও উপকূলীয় দেশগুলোর সামনে নতু চ্যালেঞ্জ হয়ে এসেছে লিবিয়া ও সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ। সন্ত্রাসবাদী বিভিন্ন গোষ্ঠী এবং রাষ্ট্রবিহীন জঙ্গিদের ক্রমবর্ধমান তৎপরতা, প্রধানত লিবিয়া ও সিরিয়া থেকে ইউরোপ-অভিমুখী শরণার্থীর ঢল এবং একটি আঞ্চলিক সংঘাত লেগে যাওয়ার আশংকা এসব উপকূলীয় দেশের নিরাপত্তার প্রতি নতুন এক চ্যালেঞ্জরূপে হাজির হয়েছে। ফলে তাদের নৌবাহিনী এবং সি-৪আইএসআর অর্থাৎ কম্যান্ড, কনট্রোল, কমউনিকেশনস, কম্পিউটারস, স্যাভেইল্যান্স ও রিকনিসন্স সিস্টেমকে আধুনিকায়ন এবং নতুন নতুন অস্ত্র ও সরঞ্জাম সংগ্রহের প্রতি আরো মনোযোগী হয়েছে এসব দেশ। তারা যোগাড় করছে সাবমেরিন, যুদ্ধজাহাজ, টহল নৌযান এমনকি মানুষবিহীন বিমান পর্যন্ত।
আসুন, দেখা যাক, লেভান্ত অঞ্চলের দেশগুলো কিভাবে আসন্ন যুদ্ধের আশঙ্কায় তাদের নৌবাহিনীকে ক্রমাগত শক্তিশালী করে চলেছে। প্রথমেই চোখ রাখি ইসরাইলের দিকে।
অল্পকিছু দিন আগেও ইসরাইলী সশস্ত্র বাহিনীগুলোর মধ্যে সবচাইতে কম বাজেট বরাদ্দ পেত নৌবাহিনী। কিন্তু এখন আর সেই অবস্থা নেই। পূর্ব ভুমধ্যসাগরীয় এলাকায় বিপুল খনিজসম্পদের সন্ধান লাভ, গাজা পরিস্থিতি এবং আরব বসন্ত - সব মিলিয়ে ইহুদি রাষ্ট্রটি হয়ে উঠেছে চূড়ান্ত রকমের সতর্ক। তাদের নৌবাহিনী ক্রমান্বয়ে বাস্তবায়ন করে চলেছে একটি ব্যাপক আধুনিকায়ন কর্মসূচি। তারই অংশ হিসেবে বিদ্যমান সারফেস প্ল্যাটফর্মগুলোর ইলেকট্রনিক ওয়ারফেয়ার অ্যান্ড উইপন সিস্টেম আধুনিকায়ন করা হয়েছে। যোগাড় করা হয়েছে সাবমেরিন প্ল্যাটফর্ম।
ইসরাইলি নৌবাহিনীর তিনটি ঘাঁটি রয়েছে। বড় রণতরী আছে ১৩টি। এছাড়াও অ্যাসাল্ট ও টহল বোট আছে ৩০টি । তাদের মূল স্ট্র্যাটেজিক সরঞ্জাম হচ্ছে জার্মানির টাইপ৮০০ ডলফিন ক্লাস ডিজেল ইলেক্ট্রিক সাবমেরিনগুলো। ২০০৬ সালে দেশটি আরো উন্নত ডলফিন ক্লাস সাবমেরিন কেনার অর্ডার দেয়, যেগুলো সম্প্রতি ইসরাইলে পৌঁছেছে। এসব সাবমেরিন এয়ার ইনডিপেন্ডেন্ট প্রপালসন দিয়ে সজ্জিত। এর সাহায্যে এসব সাবমেরিন অন্য যে কোনো সাবমেরিনের চাইতে বেশি সময় পানির তলায় ডুবে থাকতে পারে।
ইসরাইলি নৌবাহিনী একটি জার্মান অস্ত্র নির্মাতা কম্পানিকে পাঁচটি ডলফিন ক্লাস সাবমেরিনের অর্ডার দিয়েছিল ১৯৯০ সালের গোড়ার দিকে। এর মধ্যে তিনটি সাবমেরিনের দাম পরিশোধ করে জার্মান সরকার। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালে জার্মান একনায়ক হিটলার ইহুদিদের ওপর যে বর্বরতা চালিয়েছিলেন, তারই 'ক্ষতিপূরণ' হিসেবে ইসরাইলকে এ সৌজন্য দেখায় জার্মানি। ডলফিন, লেভিয়াথান ও তেকুমা নামের এ তিন সাবমেরিন ১৯৯৯ থেকে ২০০০ সালের মাঝামাঝি সময়ে কাজ শুরু করে।
ইসরাইলি নৌবাহিনীর আছে অত্যাধুনিক নানা অস্ত্রসজ্জিত সার৫ ক্লাস ছোট জাহাজ। সেখানেও আছে এমনসব মারণাস্ত্র, যা এমনকি পানির তলায়ও শত্রূকে আঘাত হানতে সক্ষম। তবে ইসরাইলি নৌবাহিনীর প্রধান দৃশ্যমান উপাদান হচ্ছে সার৫ ক্লাস রণতরী। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে কেনা হলেও এর ডিজাইনটি করে দেয় ইসরাইলি নৌবাহিনীরই। ৮৫ মিটার লম্বা এ জাহাজটির বহনক্ষমতা ১,২৭৫ টন এবং প্রতিটিতে নাবিকের সংখ্যা ২২ থেকে ২৫ জন। আকার, বহনক্ষমতা ও দায়িত্বের দিক থেকে ছোট হলেও এগুলোই অস্ত্রসজ্জা ও ইলেকট্রনিক সিস্টেমের দিক থেকে একেকটা মাঝারি সাইজের ফ্রিগেট। এর উন্নত সংস্করণ সার৬-ও নিয়ে আসছে ইসরাইলি নৌবাহিনী। ২০১৫ সালে তারা এ লক্ষ্যে জার্মানির একটি কম্পানির সাথে চুক্তিও করেছে। সেখানে এখন ওগুলোর নির্মাণকাজ চলছে।
এসব ছাড়াও ইসরাইলি নৌবাহিনীর অস্ত্রসজ্জা ও আধুনিয়নের কমতি নেই। আমরা তার অতি সামান্য অংশই বললাম মাত্র।
এবার দেখা যাক মিশরের দিকে। ১৯৭০ সালের শেষ দিক থেকেই মিশরীয় সশস্ত্র বাহিনী প্রধানত মার্কিন অস্ত্র ও সরঞ্জামে সজ্জিত হতে থাকে। ইসরাইলের মতো মিশরেও নৌবাহিনীর ভূমিকা ছিল ঈষৎ গৌণ। তবে ১৯৭৭ সালে এসে পরিস্থিতি বদলে যায়। শুরু হয় মিশরীয় নৌবাহিনীর আধুনিকায়ন কর্মসূচি।
মিশরীয় নৌবাহিনীর প্রধান যুদ্ধসরঞ্জাম হচ্ছে চারটি এফএফজি৭ ক্লাস ফ্রিগেট। ১৯৮১ সালে এগুলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে কেনা হয়। এর বাইরে আছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তৈরী আরো পুরনো দু'টি এফএফ নক্স, দু'টি চাইনিজ চিয়াংহু এবং স্পেনে তৈরি দু'টি দেসকিউবিয়ের্তা ক্লাস ফ্রিগেট। আরো আছে রাশিয়া (সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন), যুক্তরাজ্য, চীন ও ফ্রান্সের তৈরী ৫০টির বেশি অ্যাসাল্ট বোট।
২০১৩ সালের সামরিক অভ্যুত্থানের পর মিশরের সশস্ত্র বাহিনীকে আরো অস্ত্রসজ্জিত এবং আধুনিকায়নের ধুম পড়ে যায়। গত পাঁচ বছরে বিভিন্ন দেশের, বিশেষ করে ফ্রান্স ও রাশিয়ার সাথে অসংখ্য বড় বড় অস্ত্র ক্রয় চুক্তি হয় মিশরের। এর মধ্যে সবচাইতে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে দু'টি মিস্ত্রাক-ক্লাস ডকড ল্যান্ডিং জাহাজ কেনার চুক্তি।
এই দু'টি জাহাজ কেনার পেছনে মজার একটি গল্পও রয়েছে। ২০১১ সালে এ দু'টি জাহাজ কেনার অর্ডার দিয়েছিল মূলত রাশিয়া। তাদের পরিকল্পনা ছিল ভ্লাদিভস্তক ও সেভাস্তপুল নাম দিয়ে এগুলোকে ২০১৫ সালে সাগরে ভাসাবে। কিন্তু রাশিয়ার ক্রিমিয়া গ্রাসকে কেন্দ্র করে দেশটির ওপর অবরোধ আরোপিত হয় এবং তাতেই ২০১৫ সালের আগস্টে চুক্তিটি বাতিল হয়ে যায়। এর সুযোগ নিতে দেরি করে না মিশর। তারা পরের মাসেই এ নিয়ে আলোচনা শেষ করে আর ২০১৬ জাহাজ-দু'টির মালিক হয়ে যায় মিশরের নৌবাহিনি। তারা এগুলোর নাম দেয় আনওয়ার-আল সাদাত ও জামাল আবদেল নাসের। মিশর এখন জাহাজ-দু'টির জন্য কে-৫২কে অ্যাটাক হেলিকপ্টার কিনতে রাশিয়ার সাথে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে বলে জানা যায়।
চারটি গোউইন্ড ২৫০০ ছোট রণতরী কেনার জন্য মিশর ২০১৪ সালে ফ্রান্সের সামরিক জাহাজ নির্মাতা কম্পানি নেভাল গ্রূপের সাথে ১০০ কোটি ইউরোর চুক্তি করে। এর মধ্যে একটি তৈরি হয় ফ্রান্সে এবং প্রযুক্তি হস্তান্তরের মাধ্যমে বাকি তিনটি নির্মাণ করা হবে মিশরের আলেকজান্দ্রিয়া শিপইয়ার্ডে। প্রথমটি ইতিমধ্যে ফ্রান্স থেকে মিশরে এসে গেছে । এর নাম দেয়া হয়েছে এল ফাতেহ।
এর পরের বছর অর্থাৎ ২০১৪ তার নৌবাহিনীর জন্য একটি এফআরইএমএম ফ্রিগেট এবং বিমানবাহিনীর জন্য ২৪টি রাফায়েল জঙ্গি জেট বিমান কেনার চুক্তি করে। মিশর তার সাবমেরিনক্ষমতা উন্নয়নেও নজর দিয়েছে। তারা পুরনো দিনের সাবমেরিন বদলে ফেলে অত্যাধুনিক সাবমেরিন সংগ্রহ করেছে এবং আরো করছে।
দেখা যাক, মিশর ও ইসরাইলের এই অস্ত্রদৌড়ে একই অঞ্চলের দেশ গ্রীস কী করছে? ১৯৯০এর দশকের শেষ দিক থেকে গ্রীস তার সশস্ত্র বাহিনীকে আধুনিকায়নের ব্যাপক ও উচ্চাভিলাষী পদক্ষেপ নেয়। এতে অত্যন্ত গুরুত্ব দেয়া হয় বিমান ও নৌবাহিনীকে। পরিকল্পনামাফিক দেশটি বিশেষ করে জার্মানি ও ফ্রান্স থেকে বিপুল অস্ত্র সংগ্রহের চুক্তি করে। তবে এক্ষেত্রে তাদের যাত্রাভঙ্গ করে ২০০৯ সালের ভয়াল অর্থনৈতিক মন্দা। এ মন্দার আঘাতে রাষ্ট্রের অন্য সকল মেকানিজমের মতো সশস্ত্র বাহিনীর প্রস্তুতি ও আধুনিকায়ন কার্যক্রমও নুয়ে পড়ে। পাশাপাশি ইউরোপিয়ন ইউনিয়নের নিষেধাজ্ঞা এবং সাহায্য দানে শর্ত আরোপের ফলে বেশ কয়েকটি অস্ত্র সংগ্রহ কর্মসূচি স্থগিত হয়ে যায়।
এর পরও দেশটির ভাণ্ডারে মজুদ অস্ত্র একেবারে কম নয়। টানাপোড়েনের মাঝেও তারা জঙ্গি বিমান, সাবমেরি্ন ইত্যাদি সংগ্রহের চেষ্টা থেকে একেবারে পিছিয়ে নেই।
এবার আসা যাক গ্রীক জনগোষ্ঠী অধ্যুষিত দক্ষিণ সাইপ্রাসের দিকে। এটি মূলত আধা-স্বাধীন একটি অঞ্চল। গ্রীকদের ইশারাতেই এটি চলে। এর নিজস্ব কোনো নৌবাহিনী নেই, আছে একদল উপকূলরক্ষী বা কোস্ট গার্ড। এদের মূল কাজ হলে সন্ত্রাসবাদ ও চোরাচালান দমন। তবে তাদের হাতে বেশ কিছু অস্ত্র ও সরঞ্জাম আছে। ২০১০ সালে এ 'দেশ'টির সাথে একটি চুক্তি করে ইসরাইল। ওই চুক্তির অধীনে দক্ষিণ সাইপ্রাস কিছু অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম পাওয়ার চেষ্টায় আছে। ইসরাইল ও দক্ষিণ সাইপ্রাস - উভয়ের নজর কিন্তু লেভান্ত অঞ্চলের তেল ও গ্যাসের ভাণ্ডারের দিকে।
এক্ষেত্রে সবচাইতে করুণ অবস্থা সিরিয়ার। কয়েক বছরব্যাপী গৃহযুদ্ধ দেশটিকে একেবারে তছনছ করে দিয়েছে। তারা হতে পারতো লেভান্ত অঞ্চলের একটা বড় খেলোয়াড়, কিন্তু বিশ্ব রাজনীতির পাকেচক্রে পড়ে তারাই এখন খেলার মাঠে পরিণত হয়েছে।
লেবাননের অবস্থাও সিরিয়ার চাইতে তেমন ভালো নয়। ২০১৪ সালে কিছু রণতরী কেনার জন্য ফ্রান্সের সাথে চুক্তি করে লেবানন। এতে অর্থসাহায্য হিসেবে ৩০০ কোটি মার্কিন ডলার দেয়ার কথা ছিল সৌদি আরবের। পরে সৌদি আরব অঙ্গীকার প্রত্যাহার করে নিলে ফ্রান্স-লেবানন চুক্তিটিও শিকেয় ওঠে।
সবশেষে আসা যাক তুরস্কের কথায়। এটি এখন মুসলিম দুনিয়ার সবচাইতে আলোচিত দেশ। দেশটি নিজস্ব সমরাস্ত্র শিল্পের উন্নয়নে চমকপ্রদ অগ্রগতি অর্জন করেছে। তারা নৌবাহিনীকে দিচ্ছে অগ্রাধিকার। তুরস্কের সমরাস্ত্র শিল্পের নবজাগরণ ও নৌবাহিনী আধুনিকায়নের কেন্দ্রে রয়েছে মিলজেম প্রোগ্রাম। এ কর্মসূচির অধীনে একসময়ের 'ইউরোপের রুগ্ণ দেশ' তুরস্ক স্থল, নৌ ও বিমান বাহিনীর জন্য বানিয়ে চলেছে অত্যাধুনিক সব সামরিক সরঞ্জাম। তাদের সমরসজ্জার গল্পই আলাদা। সে গল্প বিস্তারিতভাবে হবে নাহয় আরেকদিন!