লেবাননের রাজধানী বৈরুতে নাইট্রিক এসিডের গুদামে ভয়াবহ বিস্ফোরণের বেশ ক'দিন পার হয়ে গেছে। ইতিমধ্যে সবাই জেনে গেছে এ বিস্ফোরণে হতাহতের সংখ্যা, ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ। জেনেছে, এ ঘটনায় প্রাণহানি হয়েছে মানুষের, বিপন্ন হয়েছে মানবতা, ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে লেবানন নামের একটি দেশ, তার রাজনীতি ও অর্থনীতি, তার ভবিষ্যৎ। ইতোমধ্যে এই বিস্ফোরণকে কেন্দ্র করেজনগণের আন্দোলনের পুরো মন্ত্রী পরিষদ পদত্যাগ করেছে। যা এখনও জানা যায়নি তা হলো, কেন ও কিভাবে ঘটলো এ ঘটনা। এ কি কেবলই একটি দুর্ঘটনা, নাকি এর পেছনে আছে এক বা একাধিক অশুভ শক্তির প্রেতচ্ছায়া?
বলা হচ্ছে, এ ঘটনা হলো লেবাননের বর্তমান সরকারের অবহেলা ও দুর্নীতিরই অনিবার্য ফল। তা নিয়ে কোনো সংশয় নেই। প্রশ্ন উঠছে, সরকারের অবহেলা ও দুর্নীতিকে কাজে লাগিয়ে অন্তর্ঘাত ঘটায়নি তো কেউ? এমন শঙ্কাকে একেবারে উড়িয়ে দেয়া যায় না, বিশেষ করে দেশটি যখন লেবানন। দেশটি যেন নানা রঙের লোকজনের এক বহুজাতিক আখড়া। সেখানে আছে সউদি এজেন্ট, ইসরাইলী গোয়েন্দা, ''উদার বিদ্রোহী'' অস্ত্রবাজ, হেজবুল্লাহ বুদ্ধিজীবী, মদ ও নারীতে আসক্ত আরব ''রাজপুরুষের'' দল, গর্বিত কালোবাজারী - এমন আর কত কী! তাই সেখানে যে-কোনো সময়ে যে-কোনো রকম ঘটনা-দুর্ঘটনা ঘটাই অতি স্বাভাবিক।
এমন প্রেক্ষাপটে লেবাননের বিস্ফোরণ নিয়ে দু'টি তত্ত্ব হাওয়ায় ভাসছে - এক. দুর্ঘটনা তত্ত্ব, দুই. ষড়যন্ত্র তত্ত্ব
দ্বিতীয় তত্ত্বটি প্রথম দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি বলেন, আমাদের ''গ্রেট জেনারেলরা'' এ বিষয়ে আমার চেয়ে বেশি জানেন এবং তারাই মনে করছেন যে এটা একটা হামলা। তিনি আরো বলেন, এটা এক ধরনের বোমা।
কিন্তু প্রেসিডেন্টের দাবি মেনে নিতে রাজি হয় না পেন্টাগন অর্থাৎ মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগ। প্রতিরক্ষামন্ত্রী মার্ক এসপার সমর্থন করেন না ষড়যন্ত্র তত্ত্ব। এ অবস্থায় নিজের কথা গিলে ফেলতে বাধ্য হন ট্রাম্প। আমতা আমতা করে বলেন, আমি দু'রকমই শুনেছিলাম। আসলে ঠিক কী ঘটেছে, এ মুহূর্তে তা কেউ বলতে পারবে না।
দুর্ঘটনা তত্ত্বের পক্ষে যথেষ্ট যুক্তি থাকলেও এবং ডোনাল্ড ট্রাম্প এক ধরনের নৈতিক চাপের মুখে নিজের দাবি ফিরিয়ে নিলেও ষড়যন্ত্র তত্ত্বের সম্ভাব্যতা একেবারে উড়িয়ে দেয়া যায় না, বিশেষ করে ইরানের মেহর নিউজ এজেন্সির দেয়া একটি খবরের পর। খবরটিতে বলা হয়, বিস্ফোরণটি যখন ঘটছিল, তখন ঘটনাস্থলের আকাশে মার্কিন নৌবাহিনীর চারটি পর্যবেক্ষণ বিমানকে ঘোরাফেরা করতে দেখা গেছে। খবরটি সত্য হলে প্রশ্ন ওঠে, তাহলে মার্কিন গোয়েন্দারা কি আগেই জানতো যে, কিছু-একটা ঘটতে যাচ্ছে!
এ প্রশ্নের জবাব খোঁজার আগে আমরা একটু পেছনে ফিরে যাই। বিস্ফোরিত গুদামের অ্যামোনিয়াম নাইট্রেটগুলো লেবাননের নয়। ছয় বছরেরও বেশি আগে রাশিয়ার মালিকানাধীন একটি পণ্যবাহী জাহাজে করে মোজাম্বিকে যাচ্ছিল। জাহাজটিতে বহন করা হচ্ছিল ২৭শ' টনের বেশি অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট। সার বানাতে কিংবা বোমা তৈরির কাজে এই রাসায়নিক ব্যবহার হয়। পথে জাহাজ ফুটো হয়ে যাওয়ায় লেবাননের রাজধানী বৈরুতের বন্দরে ভিড়ে। জাহাজটির আর গন্তব্যে ফেরা হয়নি। অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক বিরোধের কারণে যে রুশ ব্যবসায়ী জাহাজটি লিজ নিয়েছিলেন তিনি চুক্তি বাতিল করেন। এরপরই জাহাজের অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট বৈরুতের বন্দরের কাছের একটি গুদামে নেওয়া হয়। এতবছর ধরে সেখানেই তা পড়ে ছিল।
ঝুঁকিপূর্ণ এই দাহ্য পদার্থ কীভাবে সরানো হবে সে পরামর্শ চেয়ে ২০১৪ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত লেবাননের কাস্টমস কর্মকর্তারা আদালতে অন্তত ছয় বার চিঠি লিখেছেন। তারা এসব অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট রপ্তানি করা কিংবা লেবাননের সেনাবাহিনীকে অনুদান হিসাবে দিয়ে দেয়ার প্রস্তাবও করেছিলেন। কিন্তু বিচারবিভাগ তাদের একটা চিঠিরও কোনো জবাব দেয়নি।
কথা উঠছে, লেবাননের প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী বা মন্ত্রীসভার কোনো সদস্যই জানতেন না যে, ওই গুদামে এত বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক পড়ে আছে। জানতেন না কারণ তাদের জানানো হয়নি। কেননা বৈরুত বন্দরের আমলাতন্ত্র ও মাফিয়াচক্র পরস্পর সম্পর্কিত। তাদের সাথে সম্পর্ক আবার দুর্নীতির দায়ে অপসৃত প্রধানমন্ত্রী সা'দ হারিরীর উপদল আল-মোস্তাকবালের। এ উপদলটিকে মদদ দেয় সউদিরা। হারিরীর সাঙ্গপাঙ্গরা লেবাননের রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে কমপক্ষে দুই হাজার কোটি মার্কিন ডলার আত্মসাৎ করেছে, যার পরিণামে দেশটিতে তীব্র মুদ্রা সংকট দেখা দেয়। এ চক্রটি দেশের প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীকে অ্যামোনিয়াম নাইট্রেটের মজুদ সম্বন্ধে অন্ধকারে রাখতে চাইবে, এতে অবাক হওয়ার কী আছে!
প্রশ্ন হলো, অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট হলো সবচাইতে নিরাপদ একটি বিস্ফোরক। আগুনেও এটি বিস্ফোরিত হয় না। এটি বিস্ফোরিত হয় দূষণের শিকার হলে কিংবা এমন উত্তপ্ত হলে, যে উত্তাপের ফলে এতে রাসায়নিক পরিবর্তন আসে। কিন্তু এ কাজটি করলো কে বা কারা? কেউ-না-কেউ তো করেছেই। দীর্ঘ এক যুগ ঘুমিয়ে থাকা অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট তো আপনাআপনি বিস্ফোরিত হতে পারে না!
আরো দেখার বিষয় হলো, বৈরুত বিস্ফোরণের পরপরই দাউ দাউ আগুনে পুড়ে গেল সংযুক্ত আরব আমীরাতের আজামে একটি ইরানী মার্কেট আর ইরাকের নাজাফে একটি কৃষি ও খাদ্যগুদাম। এসবের মধ্যে কোনো সম্পর্ক আছে কি নেই, কোনোটাই নিশ্চিত করে বলা যায় না। যেটা নিশ্চিত করে বলা যায়, সেটা হলো লেবাননের কয়েক ট্রিলিয়ন ডলার দামের বিকাশমান সম্পদ ও রিয়্যাল এস্টেটের দিকে নজর পড়েছে বৈশ্বিক আর্থিক খাতের শকুনিদের। চলমান মন্দার সুযোগে এ সম্পদ একেবারে সস্তায় হাতিয়ে নেয়ার লোভ তারা কিছুতেই সামলে রাখতে পারছে না।
লেবাননে আসি-আসি করছে বৈশ্বিক আর্থিক খাতের আরেক শকুনি আইএমএফ। মাসখানেক আগেই তারা হুঁশিয়ার করে দিয়েছে, লেবাননের ''অন্তর্দাহ'' ক্রমেই বাড়ছে। তারা আসবে, গুছিয়ে বসবে, লেবাননের কিছু পুরনো ঋণ 'মওকুফ' করে দেবে এবং তারপরই ''কাঠামোগত সমন্বয়ের'' নামে বিছিয়ে দেবে কঠিন শর্তের জাল। শর্তের ফাঁদে পা দেয়ামাত্রই বিলিয়ন ডলারের স্রোতে নামবে ওই দেশে। শর্তযুক্ত ঋণের ফাঁদে আটকা পড়ে দেশটি। এমন পরিস্থিতিতে কাদের ভূ-রাজনৈতিক ও ভূ-অর্থনৈতিক মুনাফা হবে অর্থাৎ লাভবান হবে কারা?
বলা হচ্ছে, অন্যদের পাশাপাশি লাভের ঝুলি পূর্ণ হবে আমেরিকা, সউদি আরব ও ফ্রান্সের। ঠিক এ কারণেই ঘটনার পরপরই লেবাননে ছুটে গেছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁ। বলেছেন, লেবাননকে সবরকম সাহায্য দেবে ফ্রান্স। কে না বোঝে, এ সাহায্য হচ্ছে ''নব্য উপনিবেশবাদী'' সাহায্য। মুক্ত বাজার অর্থনীতির সুনামি ঠেকাতে আমেরিকা ও তাদের স্যাঙ্গাতরা বছরের পর বছর বাইরের দেশে এমন লুটপাটই করে আসছে।
ষড়যন্ত্র তত্ত্বের সম্ভাব্যতার আরো আভাস মেলে বৈরুত বিস্ফোরণের পরপরই ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর একটি টুইটে। ইসরাইল যদিও স্বীকার করেছে যে, বিস্ফোরিত গুদামটি হেজবুল্লাহর অস্ত্রভান্ডার ছিল না, তারপরও নেতানিয়াহু লিখেছেন, ''নিজেদের রক্ষা করার জন্য যা যা করা দরকার সবই আমরা করবো। আমি বিষয়টি হেজবুল্লাহসহ সবাইকে মাথায় রাখতে বলি।''
বৈরুত ট্র্যাজেডির মাধ্যমে হেজবুল্লাহ ও ইরানকে হীনবল করে ইসরাইল যে ভালোই ফায়দা লুটবে, তা স্পষ্ট হয় একটি ইসরাইলী পত্রিকার শিরোনাম থেকে। এতে লেখা হয়, ''বৈরুত বিস্ফোরণের যন্ত্রণা বহু দিন পোড়াবে লেবাননকে''।
ইসরাইলী গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ ভেবেছিল, ওই গুদামে বুঝি হেজবুল্লাহর অস্ত্রভান্ডার। তাই তো বিস্ফোরণের পরপরই এর কৃতিত্ব নিতে টুইট করেন ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু পরে মোসাদ বুঝতে পারে, একটা বড় ভুল হয়ে গেছে।
ইসরাইলের সাহায্য নিয়ে এ ঘোলা পানিতে মাছ শিকারে নামতে পারে সউদি আরবও। মোসাদ-এর সাথে রয়েছে তাদের গভীর সখ্য আর তারা ইসরাইলের চাইতেও বেশি করে চায় হেজবুল্লাহর ধ্বংস।
সিরিয়ান গোয়েন্দা সংস্থার ঘনিষ্ঠ একটি সূত্রও মনে করে, বৈরুতের বিস্ফোরণ আসলে হামলাই। কথিত হামলাটি হয়েছে একটি অচেনা অস্ত্রের সাহায্যে। সেটি পরমাণু অস্ত্র নয়, ক্ষেপণাস্ত্র হতে পারে। সূত্রমতে, এ বছরের জানুয়ারি মাসে সিরিয়ায় অস্ত্রটির পরীক্ষামূলক প্রয়োগ করা হয়। অবশ্য সিরিয়া বা ইরান - কোনো দেশই এ নিয়ে মুখ খোলেনি, নিরপেক্ষ কোনো সূত্র থেকেও কথিত 'অচেনা অস্ত্রের' সত্যতা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তারপরেও বলতে হয়, তাহলে কি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কথাই সত্য যে, ''এটা একটা হামলা''! তা নইলে প্রথমে লম্ফঝম্প দিয়ে পরে এ নিয়ে আর বেশি কথা না-বলার সিদ্ধান্ত কেন নিলো ইসরাইল?
বৈরুত বিস্ফোরণ নিয়ে আরো তত্ত্ব আছে। একে প্রথমে চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের প্রতি একটা বড় আঘাত হিসেবেই দেখা হয়েছিল। এ তত্ত্বের অনুসারীরা ভেবেছে, দক্ষিণপূর্ব এশিয়া বেল্ট অ্যান্ড রোড করিডোরের ভিত্তিপ্রস্তর হিসেবে ইরান, ইরাক, সিরিয়া ও লেবাননকে কনেক্টিভিটির আওতায় আনার কথা ভাবছে চীন।
তা যারা যা-ই ভেবে থাকুক, চীন ও ইরান ইতিমধ্যে বড় ধরনের বিনিয়োগ চুক্তিতে উপনীত হয়েছে, যা আইএমএফ-কে হতচকিত করেছে।
অন্যদিকে বিস্ফোরণ-পরবর্তী লেবাননের সবচাইতে বড় সাহায্যদাতা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে ইরান ও সিরিয়া। ইরান সেখানে পাঠাচ্ছে ইমারজেন্সি হসপিটাল, খাদ্যসাহায্য, ওষুধ ও চিকিৎসা সরঞ্জাম। অন্যদিকে লেবাননের সাথে তার সীমান্ত খুলে দিয়েছে সিরিয়া, সেদেশে পাঠাচ্ছে মেডিক্যাল টিম আর বৈরুতের বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে যাওয়া রোগীদের চিকিৎসা দিচ্ছে।
অনেকে বলছেন, বৈরুতে 'হামলার' পেছনে দেশটিকে 'ভাতে মারার' কৌশলও থাকতে পারে। তাই পুরো বন্দর ধ্বংস না-করে সেখানকার সাইলো বা খাদ্যগুদামগুলো ধ্বংস করে দেয়াই হয়তো 'হামলার' উদ্দেশ্য ছিল।
খাদ্যের জন্য লেবানন এমনিতেই সিরিয়ার ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল। কিন্তু মার্কিন হামলায় সিরিয়ার অনেক খাদ্যগুদাম ধ্বংস হওয়ায় তাদেরই এখন মাত্র এক মাসের খাদ্য মজুদ আছে। এ অবস্থায় তারা কিভাবে লেবাননে খাদ্য রফতানি করবে? সিরিয়া প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ গম রফতানি করে থাকে। আর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও দেশটিকে ভাতে মারার লক্ষ্যে নিয়মিতই তাদের খাদ্যগুদামগুলোতে হামলা চালায় আর শস্যক্ষেতে আগুন ধরিয়ে দেয়।
এ রকম একটা পরিস্থিতিতে লেবাননের করণীয় কী? অনেক বিশেষজ্ঞ বলছেন, লেবাননের উচিত হবে মার্কিন-ফরাশি নিভর্রতা ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে তাদের এখন কর্তব্য হলো সোজা বেল্ট অ্যান্ড রোড ও সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশনের পথে হাঁটা। সহজ কথায়, নতুন সিল্ক রোড ধরে এশিয়া অভিমুখে এগিয়ে যাওয়া।
মিলিয়ন ডলার কোশ্চেন হলো, প্রায় ধ্বংস হয়ে যাওয়া লেবানন কি তা পারবে? বিশ্ব রঙ্গমঞ্চের খেলোয়াড়রা কি তাদের ওই পথে যেতে দেবে? তাহলে কী হবে একদা অনিন্দ্যসুন্দর দেশ লেবাননের, কী হবে এককালের 'প্রাচ্যের প্যারিস' বৈরুতের? ভাবতেই অজানা আশঙ্কা কেঁপে উঠে লেবাননের মানুষ।
বিডিভিউজ-এ প্রকাশিত লেখার স্বত্ব সংরক্ষিত। তবে শিক্ষা এবং গবেষণার কাজে সূত্র উল্লেখ করে ব্যবহার করা যাবে