পরাশক্তির বিভ্রমে ভারত

ভারত কল্পনা করে, কখনও চীনের সাথে তাদের সংঘাত শুরু হলে বৃহৎ শক্তিগুলো তাদের সাহায্যে এগিয়ে আসবে - ইন্টারনেট

  • ভীম ভুরতেল
  • ১৫ জুন ২০২০, ২৩:১৬

প্রত্যেক দেশ ও জাতির কিছু আশা ও স্বপ্ন থাকে। কিন্তু সেসব আশা ও স্বপ্ন যদি বাস্তবতার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ না-হয়, তাহলে লোকে তাকে পাগলামিই বলে থাকে। ভারতের নীতিনির্ধারকদের নিয়েও পর্যবেক্ষকদের কেউ-কেউ এমন কথা বলে থাকেন। এ রকম একজন হচ্ছেন নেপালের ভীম ভুরতেল। চীন-ভারত সম্পর্কের টানাপোড়েন, এর পটভূমি ও ভবিষ্যৎ পরিণাম নিয়ে তিনি দীর্ঘ নিবন্ধ লিখেছেন এশিয়া টাইমসে। বিডি ভিউজের পাঠকদের জন্য তার লেখাটি হুবহু তুলে ধরা হলো। ভাষান্তর করেছেন হুমায়ুন সাদেক চৌধুরী

সেই ৪০-এর দশকে ইংরেজদের হাত থেকে স্বাধীনতা পাওয়ার পর থেকেই ইন্ডিয়ান স্ট্র্যাটেজিস্টরা এক ধরনের মায়া, মোহ ও বিভ্রমে ভুগছেন। তাদের এ বিভ্রম নিজেদের নিয়ে। তারা কল্পনা করে, কখনও চীনের সাথে তাদের সংঘাত শুরু হলে বৃহৎ শক্তিগুলো তাদের সাহায্যে এগিয়ে আসবে। কিন্তু লাদাখে বেশ-কিছুদিন ধরে চীন ও ভারতের সেনাবাহিনী প্রায় যুদ্ধপ্রস্তুতি নিয়ে মুখোমুখি হয়ে আছে, বৃহৎ শক্তিগুলো ভুগছে দোটানায়। তারা চীন বা ভারত - কারও সাহায্যেই এগিয়ে আসেনি। চীনের সাথে সংঘাতে বৃহৎ শক্তিগুলোর সাহায্য পাওয়ার আশা যে নেহাতই বিভ্রম এবং চীনের বিপরীতে ভারত যে অনেক পিছিয়ে, তা-ই যেন এবার আবারও প্রমান হয়ে গেল।

আসুন এবার তাকাই লাদাখের দিকে। হিমালয় অঞ্চলের উঁচু এলাকায় লাদাখ নামের এ নিস্ফলা ভূভাগ নিয়ে দু'টি বড় দেশের সামরিক শক্তির এ মহড়াকে নেহাৎ ছোট কিছু ভাবাটা বেজায় ভুল হবে। সত্যিকার অর্থে এটা হলো ভূ-কৌশলগত দাবার বোর্ডে এশিয়ার শক্তিধর দেশগুলোর পদচারণারই প্রদর্শনী। একটি নয়, বরং একাধিক ইস্যুতে ভারতের ওপর ক্ষুব্ধ হয়েই তাদের ওপর চাপ সৃষ্টি করেছে চীন।

প্রথমত, কোভিড-১৯ অতিমারী মোকাবিলায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ভূমিকা নিয়ে একটি নিরপেক্ষ তদন্তের উদ্যোগ নিয়েছে অস্ট্রেলিয়া ও ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন। এতে সমর্থন দিয়েছে ভারত। ভারতের এ ভূমিকাকে ভালোভাবে নেয়নি চীন।

দ্বিতীয়ত, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও স¤প্রতি সাত দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের নিয়ে একটি ভার্চুয়াল মিটিং করেন। এতে যোগ দেন অস্ট্রেলিয়া, ব্রাজিল, ইসরাইল, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীগণ। সবগুলো দেশই আমেরিকার ঘনিষ্ঠ মিত্র। মার্কিন নেতৃত্বাধীন ন্যাটো জোটে না-থাকলেও এসব দেশ যে-কোনো মার্কিন উদ্যোগে চোখ বুজে সমর্থন দিয়ে থাকে। এ মিটিংকে দেখা হয় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থায় তাইওয়ানের পূর্ণ সদস্যপদ পাওয়ার পথ প্রশস্ত করার মার্কিন উদ্যোগ হিসেবে। এতে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুব্রানিয়াম জয়শঙ্করের যোগদানে ক্ষিপ্ত হয় চীন।

তাইওয়ানের সাথে সাংস্কৃতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সেদেশে কয়েক জন মন্ত্রীকে পাঠানোর পরিকল্পনাও করছিল ভারত। ইলেকট্রনিকস, ফাইভ-জি টেলিকম প্রযুক্তি, সেমিকন্ডাক্টর ও স্বাস্থ্য সুরক্ষা প্রযুক্তির ক্ষেত্রে তাইওয়ানের কাছ থেকে কারিগরী সহায়তা পাওয়াই ভারতের লক্ষ্য। কিন্তু চীন ভাবছে, ভারত ''এক চীন'' নীতির প্রতি সমর্থনের যে অঙ্গীকার করেছিল, এসব হচ্ছে সেই অঙ্গীকার থেকে সরে আসার লক্ষণ। শুধু এসব কারন নয় চীনের ক্ষুদ্ধ হওয়ার আরো কিছু কারন আছে।

ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে মার্কিন নেতৃত্বাধীন চার দেশীয় জোটে ভারতের ক্রমবর্ধমান অংশগ্রহন। এ জোটে থাকায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, জাপান ও অস্ট্রেলিয়ার নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা সহায়তা পেতে পারছে ভারত। এছাড়া ভারতকে চীনের সন্দেহ করার আরও একটি কারণ হলো দক্ষিণ চীন সাগরে মার্কিন রণকৌশলের প্রতি ভারতের প্রচ্ছন্ন সমর্থন।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সরকার গত মাসে ভারতে চীনা বিনিয়োগের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। চীন স্পষ্টতই এতে ক্ষুব্ধ হয়। তারা বলে, ভারতের এ পদক্ষেপ বৈষম্যমূলক এবং বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার বিধান লঙ্ঘন। ভারত গত মাসে একেবারে শেষ মুহূর্তে এসে এশিয়া-প্যাসিফিক রিজিওনাল কমপ্রিহেনসিভ ইকনমিক পার্টনারশিপ বা আরসিইপি-তে যোগ দেয়ার সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে। এটি ছিল চীনের উদ্যোগ। এর লক্ষ্য, আসিয়ান দেশসমূহ, দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান, অস্ট্রেলিয়া, নিউ জিল্যান্ড ও ভারতের মধ্যে একটি আঞ্চলিক বাণিজ্য চুক্তি করা। ভারতের লাস্ট মিনিটের পিছু টানকে স্বভাবতই ভালোভাবে নেয়নি চীন।

ভারতের নীতিপ্রনেতারা কোভিড-১৯ অতিমারীতে চীনের বিপুল ক্ষতির যে উচ্চাশা করেছিলেন, তা পূর্ণ হয়নি। তারা ভেবেছিলেন, এ অতিমারীর ফলস্বরূপ বিপুলসংখ্যক মার্কিন কম্পানি চীন ছেড়ে ভারতে চলে আসবে। বাস্তবে দেখা গেল, মাত্র পাঁচ পারসেন্ট মার্কিন কম্পানি চীন ছেড়ে ভারতে চলে এসেছে, তাও কোভিড-১৯ অতিমারীর কারণে যতটা নয়, তার চাইতে বেশি হলো চীন-মার্কিন বাণিজ্যযুদ্ধের কারণে। এ 'যুদ্ধ' শুর হয় ২০১৮ সালের মার্চ মাসে। আর চীনত্যাগী বেশিরভাগ মার্কিন কম্পানি নতুন গন্তব্য হিসেবে ভারতের চাইতে বেশি পছন্দ করেছে ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড অথবা তাইওয়ানকে। এর কারণ হলো, অবকাঠামো সূচকে চীনের চাইতে ভারত অনেক পিছিয়ে।

২০১৯ সালে নরেন্দ্র মোদি ও ডোনাল্ড ট্রাম্প - ব্লুমবার্গ
২০১৯ সালে নরেন্দ্র মোদি ও ডোনাল্ড ট্রাম্প - ব্লুমবার্গ

 

চীনের প্রেসিডেন্ট সি জিনপিং ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর মধ্যে উহান ও মামাল্লাপুরমে কয়েকটি অনানুষ্ঠানিক শীর্ষ বৈঠক হয়। সেখানে দেয়া কিছু প্রতিশ্রুতি ভারত পরে রক্ষা করেনি। এটা চীনকে ক্ষুব্ধ করে। চীনের এ ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটে গত মাসে তাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে। এতে কোনো বিশেষ চুক্তির কথা উল্লেখ না-করে দু' দেশের নেতাদের মধ্যে সম্পাদিত চুক্তি ও প্রতিষ্টিত মতৈক্য মেনে চলার এবং পরিস্থিতকে জটিল করে তুলতে পারে এমন কোনো একতরফা সিদ্ধান্ত না-নিয়ে পাশাপাশি থেকে একযোগে কাজ করার জন্য ভারতের প্রতি আহবান জানানো হয়।

চীনের সাথে সম্পাদিত চুক্তি ও প্রতিষ্টিত মতৈক্য মেনে না-চলার মধ্য দিয়েই ভারতের একগুঁয়ে মনোভাব এবং আপন অবস্থান সম্বন্ধে এক ধরনের মোহ বা বিভ্রান্তি ফুটে ওঠে। অথচ তুলনা করলে দেখা যাবে, বিভিন্ন ক্ষেত্রে চীনের চাইতে অনেক বেশি পিছিয়ে আছে ভারত। উদাহরণস্বরূপ অর্থনীতির তুলনা করা যায়। চীনের জিডিপি যেখানে ১৪ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার, ভারতের সেখানে দুই দশমিক সাত ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারেরও কম। চীনের জিডিপি ভারতের পাঁচ গুণ এবং প্রতিরক্ষা ব্যয় তিন দশমিক সাত গুণ বেশি। চীন ও ভারত যখন অর্থনৈতিক দিক থেকে প্রায় সমান শক্তিসম্পন্ন ছিল, সেই তখনও ১৯৬২ সালের যুদ্ধে ভারতের বিপুল ক্ষতি করতে পেরেছিল চীন। মনে করা যেতে পারে, ১৯৬০ সালে ভারতের মাথাপিছু জিডিপি ছিল ৮২ দশমিক ১৯ মার্কিন ডলার আর চীনের ছিল ৮৯ দশমিক ৫২ মার্কিন ডলার।

সত্যি বলতে কী, চীন এখন অনেক ক্ষেত্রে ভারতের চাইতে এগিয়ে, যা ভারতের নীতিনির্ধারকরা কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না। একসময় বিমান পরিবহনের ক্ষেত্রে ভারতকে চীনের চাইতে অগ্রগামী মনে করা হতো। কিন্তু এখন চীনের উড়োজাহাজের সংখ্যা ভারতের দ্বিগুণ। তারপরও কী এক মোহের বশে ভারতের নীতিনির্ধারকরা ভেবে থাকেন, ভারত ও চীন সমানে সমান।

এমন ভাবনা থেকেই হয়তো বা, ২০১৯ সালে দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় এসে প্রধানমন্ত্রী মোদী ভারতের স্ট্র্যাটেজি ও বিদেশ-নীতির কয়েকটি পুরনো নীতি একেবারে পাল্টে দেন। এর একটি হলো, সংবিধানের ৩৭০ ধারা বিলুপ্ত করে জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিল করা। এ কাজটি করতে গিয়ে এর ভূ-রাজনৈতিক অভিঘাত কী হতে পারে, তা গভীরভাবে খতিয়ে দেখেনি আর চীনকেও বিবেচনায় রাখেনি বা গোণায় ধরেনি ভারত।

কেন ধরেনি - এর জবাব খুঁজতে গিয়ে পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, এর কারণ হলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। ভারতের নীতিনির্ধারকরা মনে করেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র হলো ভারতের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার ও বন্ধু। ২০১৪ সাল পর্যন্ত তাদের এ ধারণাই বদ্ধমূল ছিল। একই সময় চীনকে তারা প্রতিযোগি বলেই ভাবতো। ২০১৫ সালের জানুয়ারি মাসে জয়শঙ্কর পররাষ্ট্রমন্ত্রী হওয়ার পর চীন সম্বন্ধে ভারতের মনোভাবে নাটকীয় পরিবর্তন আসে। ভারতীয় গণমাধ্যমে এ সময় চীনকে 'ভারতের এক নাম্বার শত্রূ' হিসেবে চিত্রিত করা হতে থাকে। আর ২০১৬ সাল পর্যন্ত ভারতের নীতিনির্ধারকরা ভারত-মার্কিন মৈত্রীকে দেখতে থাকেন 'একবিংশ শতাব্দীতে দুই বৃহৎ গণতন্ত্রের অংশীদারিত্ব' হিসেবে। এর পরই এক বিপজ্জনক গন্তব্যের দিকে যাত্রা শুরু করে ভারত : এশিয়ান ভূ-রাজনীতিতে চীনবিরোধী লড়াইয়ের অগ্রসৈনিকে পরিণত হয়।

ভারতীয় নীতিনির্ধারকরা মনে হয় ভেবেছিলেন যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অংশীদার হয়ে তাদের দেশ লাভবান হবে। কিন্তু তারা যা আশা করেছিলেন তার কিছুই পাননি। বরং চীনকে আপন সীমানায় কোণঠাসা করে রাখার মার্কিন চেষ্টায় ভারতের অনর্থক যোগদান ঠেকাতে ব্যর্থ হয়েছেন তারা। যুক্তরাষ্ট্রের প্রচন্ড চাপের মুখে নতি স্বীকার করতে হয়েছে ভারতীয় নীতিনির্ধারকদের। ভারত একটি বৈশ্বিক পরাশক্তি - এ রকম মনোভাব যতই ভারতীয় নীতিনির্ধারকদের থাকুক না কেন, ইতিহাস কিন্তু বলে ভিন্ন কথা। বলে, ভারত দেশটি কখনোই তার অগ্রাধিকার নির্ধারণ করতে এবং পররাষ্ট্র ও নিরাপত্তা ইস্যুতে যথাযথ সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম হয়নি। দেশটি ''কৌশলগত স্বায়ত্তশাসন'' উপভোগ করতেও বার বার ব্যর্থ হয়েছে।

১৯৬২ সালে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের সাথে ভুল জোট গড়ে ভারত তার ''কৌশলগত স্বায়ত্তশাসন'' হারায়। এর আগে ১৯৬০ সালে চীন-সোভিয়েত সম্পর্ক ছিন্ন হয়। এ প্রেক্ষাপটে চীনের সাথে যুদ্ধে ভারতকে মদদ দিতে থাকে সোভিয়েত ইউনিয়ন। এ সময় ভারতের সোভিয়েত-নিভর্রতা দেশটির বড় ধরনের কৌশলগত ভুল বলে প্রমানিত হয়। তারা যুদ্ধে হেরে যায়। পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, ২০১৭ সালে দোকলামে এবং এখন লাদাখে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওপর নির্ভর করে একই ভুলের পুনরাবৃত্তি করতে যাচ্ছে ভারত।

ভারতীয় নীতিনির্ধারকরা একটা জ্বলন্ত সত্য দেখেও দেখছেন না যে, চীন ও ভারতকে বিচ্ছিন্ন রেখে দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া এবং ইন্দো-প্যাসিফিক এলাকার মাথার ওপর ছড়ি ঘোরানোই মার্কিনীদের আসল উদ্দেশ্য। তারা কিছুতেই এশিয়ার দুই সুপার পাওয়ার চীন ও ভারতের মধ্যে সৌহার্দ্য প্রতিষ্ঠা হতে দেবে না। কিন্তু ভারতীয় নীতিনির্ধারকদের ভ্রান্তি কিছুতেই ঘোচে না। তারা চীনের সবকিছু নিয়েই বিভ্রান্তিতে ভোগেন। অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, প্রযুক্তিগত এবং সামরিক ও কৌশলগত শক্তিমত্তা - যে কোনো বিচারেই ভারতের চেয়ে বহু দূর এগিয়ে আছে চীন।

ভারতের মার্কিন-নিভর্রতার কথা বলা হলেও এ নিভর্রতা -যে কতটা অনির্ভরযোগ্য, তা ২০১৭ সালে ভুটান-চীন-ভারত ত্রিদেশীয় সীমান্ত সংযোগস্থল দোকলামে হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছে ভারত। দোকলাম সমস্যা শুরুর আগের বছর ২০১৬ সালে আমেরিকার সাথে লজিস্টিক এক্সচেঞ্জ মেমোরেন্ডাম অব অ্যাগ্রিমেন্ট চুক্তি করে ভারত। এ চুক্তির অধীনে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র একে অপরকে সামরিক সহায়তা দেয়ার কথা। এর ওপর ভর করে মোদী তো সেবার চীনের বিরুদ্ধে প্রায় যুদ্ধই ঘোষণা করতে বসেছিলেন। সেটা ছিল কূটনৈতিক ক্ষেত্রে ভারতের একটা চরম পরাজয়। চীন এখন দোকলামের ইতিহাসেরই পুনরাবৃত্তি ঘটাতে চাইছে লাদাখে। তারা চাইছে, সীমান্তের এ সমস্যা জিইয়ে থাকুক, যাতে ভারত ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে এবং পাশ্চাত্যের সাথে সম্পর্ক জোরদারের বিশেষ অবসর না-পায়।

ভারত বর্তমানে এমন এক অবস্থানে যে দক্ষিণ এশিয়ায় তার বন্ধু বলতে তেমন কেউ নেই। এ অঞ্চলে চীনের সাথে পাল্লা দিতেও সক্ষম নয় ভারত। কেননা, চীন এ অঞ্চলের বিভিন্ন দেশকে সহজ শর্তে সাহায্য দিয়ে থাকে। চীন চায় শুধু সম্মান আর 'এক চীন নীতি'র প্রতি সমর্থন। এর বিনিময়ে এসব দেশকে সব রকম রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তিগত সহায়তা দিয়ে থাকে তারা। চীন কখনোই কোনো বিশ্বশক্তিকে তার বিরুদ্ধে খেলতে দিতে চায় না।

কোনো ফ্রন্টেই চীনের সাথে পাল্লা দেয়া যাচ্ছে না - এ বাস্তবতাটা ভারতীয় নীতিনির্ধারকরা কিছুতেই হজম করতে পারছেন না। কিন্তু না-পারলেও এটাই বাস্তবতা।

ভীম ভুরতেল : নেপালের ত্রিভুবন বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্ন্তজাতিক সর্ম্পক বিভাগের অধ্যাপক ও নেপাল সাউথ এশিয়ান সেন্টারের এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর।

প্রতিবেদনটির ভিডিও দেখুন

বিডিভিউজ-এ প্রকাশিত লেখার স্বত্ব সংরক্ষিত। তবে শিক্ষা এবং গবেষণার কাজে সূত্র উল্লেখ করে ব্যবহার করা যাবে